শিরোনাম
বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘন কুয়াশায় সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

ঘন কুয়াশায় সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

প্রচন্ড শীতে জবুথবু উত্তরের জনপদ। এবার কোনো সূর্যের দেখা মিলছে না। সড়কে লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। এই সুযোগে চোরাকারবারিরা লালমনিরহাট সীমান্ত পথে গরু পারাপারের সঙ্গে মাদকের চালান আনতে সক্রিয় রয়েছে। শীতের শুরু থেকেই ভারতীয় গরু ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সীমান্তগুলোতে চোরাকারবারিদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ‘রাতের রাজা’ নামে পরিচিত এই সিন্ডিকেট বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সিন্ডিকেটটির বেপরোয়া কর্মকান্ডে বিভিন্ন সীমান্তে গত দুই মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নির্যাতনে আটজনের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। তবুও থামছেই না সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কঠিন নজরদারির দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।  বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয় ওয়াসকুরুনী ও আয়নাল হক নামে দুই বাংলাদেশি। ২৭ নভেম্বর হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকড়ি সীমান্তে সাদ্দাম হোসেন বিএসএফের নির্যাতনে নিহত হয়। ১৪ ডিসেম্বর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত হয় ভারতীয় এক গরু ব্যবসায়ী। তার এক দিন পর ১৫ ডিসেম্বর ওই উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের নির্যাতনে শাহাদাত হোসেন নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়। ২৯ ডিসেম্বর জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাদিকুল রহমান সাদিক ও নাজির হোসেন নামে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। একই দিনে জেলার আদিতমারী এলাকায় গরু চোরাচালানীর হামলায় একজন গ্রাম পুলিশও আহত হয়। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর রাতে বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিপুল মিয়া বাংলাদেশি রাখালের মৃত্যু হয়। বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে সক্রিয় থাকার পরেও চোরাচালানীরা কিভাবে যাচ্ছে? এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চোলাচালানীদের সীমান্তে এলাকাভিত্তিক একজন করে লাইনম্যান রয়েছে। ওই লাইনম্যান এক একটি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সেই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিজিবি’র গতিবিধি ও অবস্থান লক্ষ্য করেন। বিজিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় টহলে গেলেই তারা সুযোগ বুঝে সীমান্ত দিয়ে মাদক ও ভারতীয় গরু নিয়ে আসেন। বিনিময়ে মাদক ও গরু ব্যবসায়ীরা ওই সিন্ডিকেটকে গরু প্রতি কমিশন দেন। কিন্তু সিন্ডিকেটটিকে টাকা দিলেও সীমান্ত পথে গরু আনতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক বাংলাদেশি। মাঝখানে বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে টাকা তুলে লাভবান হচ্ছেন কথিত লাইনম্যানরা। সীমান্তবর্তী লোকজন জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের সাধ্যমতো সীমান্তের নিরাপত্তায় চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু দুই একজন চোরাচালানীর কারণে সীমান্তে এমন হত্যাকাে র ঘটনা ঘটেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র ১৫ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ ও ৬১ ব্যাটালিয়ামের অধিনায়ক হাসান শাহরিয়া মাহমুদ বলেন, আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় সীমান্তবাসীকে সর্তক করছি। বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য সীমান্তের নিরাপত্তায় সক্রিয় রয়েছে। তারপরও দুই একজন সীমান্তে যাওয়ার চেষ্টা করছে ফলে এমন ঘটনা ঘটছে।

 আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর