রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অব্যবস্থাপনায় সেবাবঞ্চিত রোগী

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

অব্যবস্থাপনায় সেবাবঞ্চিত রোগী

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগী। জেলার সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও প্যাথলজিতে যেতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার খরচ সরকারি হিসাবের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি গুনতে হচ্ছে তাদের। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার মালিকদের যোগসাজশে সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রাংশ কৌশলে নষ্ট করে রোগীদের বাইরে পাঠানো হয়। হাসপাতালের ওষুধ, প্যাথলজি ও এক্স-রে বিভাগের কেমিক্যালসামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। সরবরাহের টেন্ডার হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন মিলছে না। ঠিকাদারকে কার্যাদেশ না দেওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। এক্স-রে দুই মাস ও প্যাথলজি বিভাগের সব কার্যক্রম প্রায় এক মাস বন্ধ আছে। সূত্র জানান, প্রতি বছর হাসপাতালে ওষুধসহ প্যাথলজি, এক্স-রে বিভাগের সার্বিক সামগ্রীর জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাকি ৬৫ শতাংশ টাকার ওষুধসামগ্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়। ঝালকাঠি অংশের টেন্ডার হলেও ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায়। সব পরীক্ষানিরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশু রোগী হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে না পারায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকের অর্থিক সংকুলান না হওয়ায় বাইরে থেকে জরুরি পরীক্ষা করানো সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালে হাঁটুর এক্স-রে পরীক্ষা করাতে আসা গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মতিউর রহমান বলেন, ‘জানতাম না এক্স-রে ফিল্মের সংকটে কার্যক্রম বন্ধ। আউটডোরে চিকিৎসক এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু এখানে না করায় ৪০০ টাকার এক্স-রে বাইরের ল্যাব থেকে ৯০০ টাকায় করাতে হয়েছে।’ কীর্তিপাশার জয়নব বিবি, ধানসিড়ি ইউনিয়নের আসলাম শেখ বাইরে থেকে রক্ত, প্রস্রাব, এসবিএসএজি ও এজিপিটি পরীক্ষা করিয়ে ২৯ মার্চ আউটডোরে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তারা জানান, ‘আমাদের এসব পরীক্ষা করাতে বাইরে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে; যা হাসপাতাল থেকে করলে ১ হাজার ৭০০ টাকায় পারা যেত।’ হাসপাতলের প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত জীবন বড়াল বলেন, ‘শুনেছি ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করতে অনুমোদন পাচ্ছেন না। তাই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বেশ কিছু দিন বন্ধ।’ হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার সোহাগকৃষ্ণ পিপলাই বলেন, ‘ছয় মাস আগে টেন্ডার হলেও এখনো কার্যাদেশ পাইনি। তাই এ হাসপাতালের ওষুধসহ অন্য মালামাল ও সামগ্রী সরবরাহ করতে পারছি না।’ তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ বলেন, ‘আমি কার্যাদেশ না দেওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টির তথ্য সঠিক নয়। কার্যাদেশ দেওয়ার আগে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন পেলে কার্যাদেশ দেওয়া হবে।’ ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালে টেন্ডারের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখে এসেছি। তার পরও তত্ত্বাবধায়ক কেন কার্যাদেশ দিচ্ছেন না আমার বোধগম্য নয়।’

 

সর্বশেষ খবর