বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রধান শিক্ষকশূন্য ফেনীর ২৫৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়

জমির বেগ, ফেনী

প্রধান শিক্ষকশূন্য ফেনীর ২৫৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষা অফিসারদের অধিকাংশ পদ শূন্য নিয়েই চলছে ফেনীর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে জেলায় ২৫৫ জন প্রধান শিক্ষক ও ১৪২ জন সহকারী শিক্ষকের পদই রয়েছে শূন্য। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রম হচ্ছে মারাত্মকভাবে ব্যাহত। দীর্ঘদিন শিক্ষক সংকটের কারণে উচ্চবৃত্ত পরিবারে শিশুরা যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না তেমনি নিম্ন বৃত্তের যারা ভর্তি হয়েছে তারাও হারাচ্ছে প্রাথমিকে পড়া লেখার আগ্রহ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফেনীর ছয় উপজেলায় ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্কুলগুলোর মধ্যে ২৫৫ জন প্রধান শিক্ষক ও ১৪২ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তন্মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার ১৫১টি স্কুলের মধ্যে ৮৮ জন প্রধান শিক্ষক ও ২৩ জন সহকারী শিক্ষক, দাগনভূঞা উপজেলার ১০২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯ জন প্রধান শিক্ষক ও ২৪ জন সহকারী শিক্ষক, সোনাগাজীর ১১০টি স্কুলের মধ্যে ৬২ জন প্রধান শিক্ষক ও ৩৮ জন সহকারী শিক্ষক, ছাগলনাইয়ায় ৭৮টি স্কুলের মধ্যে ৩২ জন প্রধান শিক্ষক ও তিনজন সহকারী শক্ষিক, পরশুরামের ৫১ স্কুলের মধ্যে ২৪ জন প্রধান শিক্ষক ও ২৫ জন সহকারী শিক্ষক এবং ফুলগাজীর ৬৭ স্কুলের মধ্যে ৩৫ জন প্রধান শিক্ষক ও ২৯ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া জেলায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারে ২৫টি পদের মধ্যে ১৩টিই শূন্য রয়েছে। জেলায় সহকারী মনিটরিং অফিসার, কম্পিউটার অপারটের, ক্যাশিয়ার ও গাড়িচালকের একটি করে পদ থাকলেও বছরের পর বছর তা শূন্য রয়েছে। অফিস সহকারী কামকম্পিউটার অপারেটরের ১৩টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। একইভাবে দীর্ঘদিন অফিস সহায়কের ১০ পদের বিপরীতে আটটি পদই শূন্য রয়েছে। হিসাব সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে চারটি ও উচ্চমান সহকারীর দুটি পদ শূন্য রয়েছে। ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, আমরা তো নিয়োগ দিতে পারছি না। দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ বা ১৩ সালের পর আর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন সরকারি শিক্ষকদের পদোন্নতিও বন্ধ রয়েছে। মামলা আছে, প্রধান শিক্ষকদের স্কেল আপডেট করার কারণে, বিভিন্ন সমস্যার কারণে পদোন্নতিও বন্ধ নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। সে কারণে এ দুরবস্থা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ সহকারী শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম করায় দেখা দিয়েছে সংকট। একদিকে প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কাজে তৈরি হচ্ছে স্থবিরতা। অন্যদিকে প্র্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রভাব। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসনকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও, যেমন আসছে না গতি, তেমনি শিক্ষক শূন্যতাসহ নানাবিধ সংকটের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি করাতে আগ্রহ হারাচ্ছে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চর দরবেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক শেখ মোহাম্মদ জানান, স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। অভিভাবকরা শিগগিরই বিদ্যায়লয়গুলোর প্রধান ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর