ঝিনাইদহে অবৈধভাবে নবগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীর জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ ও খনন করা হচ্ছে পুকুর। এতে পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া, অবৈধভাবে দখল ও দূষণে নদীর কোনো কোনোটি নাব্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। হারিয়ে গেছে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। নদীতীরবর্তী গ্রামের জেলেরা পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১২টি নদীই এখন অস্তিত্বসংকটে পড়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের। তাদের আরও অভিযোগ, নদীতীর থেকে ইচ্ছামতো মাটি কেটে অনেকে বিক্রি করছেন বিভিন্ন ইটভাটায়। শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য নদীতে চাষাবাদ করায় আরও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যেসব নদীতে এক সময়ে লঞ্চ-স্টিমার চলত এখন সেখানে নৌকারও দেখা মেলে না। এভাবে চলতে থাকলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে ঝিনাইদহের ১২টি নদীই হারিয়ে যেতে পারে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। নদীগুলো হলো- নবগঙ্গা, কালী, কুমার, ডাকুয়া, চিত্রা, বেগবতী (ব্যাঙ), কপোতাক্ষ, ফটকি, ভৈরব, কোদলা, যমুনা ও বেতনা।
শৈলকুপার মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী মন্টু বলেন, এ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদে এক সময় চলত বড় বড় গহনার নৌকা। পাওয়া যেত ইলিশ মাছ। পণ্য পরিবহন ও মানুষ চলাচলের জন্য ব্যবহার হতো নৌকা-স্টিমার। সেই কুমার নদ এখন মৃত। জেলার অন্য নদীগুলোর ব্যাপারে একই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, দীর্ঘদিন খনন না করায় নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগেছে। পড়েছে পলি। আমরা সব নদীর তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করছি। নদীগুলো খননের প্রস্তাবনাও মন্ত্রণালয়ে গেছে। ঝিনাইদহ শহরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীর ৬৭ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দখলমুক্ত করে খনন শুরু করা হবে। চিত্রা নদী দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাউবো পুরো জেলার অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল জানান, প্রশাসন নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অচিরেই দখলদার চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সদর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নবগঙ্গা, বেগবতী ও ফটকি নদী। সরেজমিন জানা যায়, নবগঙ্গার জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্ট। শহরের ক্যাসেল ব্রিজের কাছে এ নদীর জমিতে কাটা হয়েছে পুকুর। চাকলাপাড়ায় কয়েকজন প্রভাবশালী নদী দখল করে বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। মহেশপুরের কোদলা নদীর জায়গায় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে সুরম্য ভবন। কপোতাক্ষ নদে বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলা দিয়ে গেছে বুড়ি ভৈরব, বেগবতি নদী। এ নদীর জায়গা দখল করে মার্কেট, বাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। চিত্রা নদী দখলমুক্ত করতে ২০২৩ সালে তালিকা করা হলেও এখানো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
শৈলকুপা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গড়াই, কুমার নদ ও কালী নদী। এই নদীর দুই ধারে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাড়ি, মার্কেটসহ নানা স্থাপনা। নদীর মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।