স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৃত স্বামীর স্বীকৃতি আদায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ৭৫ বছরের বিধবা সুফিয়া বেওয়া। কিন্তু যে দরজায়ই গিয়েছেন, সেটাই বন্ধ হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে ''টাকা দাও, মিলে যাবে স্বীকৃতি''। কিন্তু দেশের জন্য যার স্বামী বীরের মতো জীবন দিয়েছেন সেই সুফিয়া তো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবার নয়। এছাড়া তার কাছে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বীকৃতির প্রমাণপত্র। তাই পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার নৌবাড়িয়া গ্রামের হাজী ইউসুফ আলী সরদারের মেয়ে সুফিয়া বেওয়া আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে তার স্বামীর প্রাপ্য সম্মানটুকু চেয়েছেন।
স্বামী আমজাদ হোসেনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ৪৪ বছর ধরে লড়ছেন সুফিয়া বেওয়া। ১৯৭১ সালে 'স্বামীর মৃত্যুর' পর দ্বিতীয় বিয়েটিও করেননি সেই সময়ে ৩১ বছর বয়সী এ নারী। দুই সন্তানকে বুকে আগলে কাটিয়ে দিয়েছেন এতটা বছর।
ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে সুফিয়া বলেন, তার স্বামী আমজাদ হোসেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু শহীদদের তালিকায় তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমজাদ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নাচোল স্টেশনে রিলিভিং বুকিং ক্লার্ক পদে কর্মরত ছিলেন। সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে উঠলে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাকিস্তান সরকারের চাকুরি ত্যাগ করে তিনি সঙ্গীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে অধিকতর প্রশিক্ষণ গ্রহনের উদ্দেশ্যে রহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত হয়ে ভারত গমনের জন্য একটি ট্রেনে উঠে বসেন। এক বিহারী টিটি বিষয়টি জানতে পেরে প্লাট ফরমে তল্লাশিরত পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যদের বলে দেয়। তখন হানাদার বাহিনী আমজাদ হোসেন ও তার সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধা সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ কোথায় ফেলে দেয় তা আজও জানা যায়নি।
সুফিয়া বেওয়া জানান, যুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে আমজাদ হোসেনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ ঘোষণা করে সমবেদনা জানিয়ে তাকে (সুফিয়া খাতুন) নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্র দেন। পত্রের স্মারক নং প্রত্রাক/৬-৪-৭২সিডি/৩১৬ তাং ১৬/০২/৭৩। সেই পত্রের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাকে দুই হাজার টাকা অনুদান দেন। এ সময় সুফিয়া খাতুন নাচোল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন কমান্ডার চৌতন বর্মার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র প্রদর্শন করে বলেন, আমজাদ হোসেন ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিক এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তিনি কয়েকবার আবেদন করেছেন কিন্তু আর্থিক দাবি মেটাতে না পারায় ভাঙ্গুড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোকছেদ আলী তাকে কোনো প্রত্যয়ন দেননি বরং বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত চিঠিটাও তিনি ছুঁড়ে ফেলে দেন। তাই বৃদ্ধা বয়সে দেশ প্রেমিক স্বামীর উপযুক্ত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে সুফিয়া খাতুনের পুত্র সহকারি শিক্ষক মো. সৈয়দ আলীও উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ