বৈশাখের দুপুরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে রাজধানী। গুলশানের লেকপাড় সড়কে গাড়ির দীর্ঘ জট। সামনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ডুবে থাকা গর্তে প্রাইভেট কারের এক চাকা বসে গেছে। কোনোভাবেই গর্ত থেকে গাড়ি বের করতে পারছেন না চালক। পাশের খাবাবের দোকানের কর্মচারী বলেন, এ সড়কে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটে। খানাখন্দে উল্টে পড়ে রিকশা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ।
রাজধানীর গুলশান লেকের পাড়ের সড়কটি হাতিরঝিলের গুদারাঘাট থেকে দূতাবাস এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাঁশতলা পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাড্ডা-শাহজাদপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। কিন্তু বর্তমানে একেবারেই চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে। দীর্ঘ এ সড়কে চলাচলকারীদের ভোগান্তিও যেন দীর্ঘ। যানজট এড়াতে বিকল্প সড়ক হিসেবে এ পথ জনপ্রিয় হলেও খানাখন্দে ভরা থাকায় যাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গুপীপাড়া এলাকার বাসিন্দা জামিল হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে রাস্তাটির অবস্থা এমন বেহাল হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। আগের কাউন্সিলরের কাছে এলাকার মানুষ অনেকবার অভিযোগ দিয়েছেন এ রাস্তার জন্য। দিনে দিনে চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। পিচঢালাই রাস্তাটির বেশির ভাগ জায়গায় ভেঙে ঢালাই উঠে গেছে। এ সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার ছেলের হাত ভেঙে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাটির এমন বেহাল দশা যে, রাস্তার প্রতি এক মিটার পরপর একটি করে খানাখন্দ। রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে নিচের মাটি পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার খানাখন্দে পানি জমে আছে। যে কারণে চালকরা দেখে বুঝতে পারছেন না এসব গর্তের গভীরতা কতটুকু। রিকশা থেকে শুরু করে অন্য যানবাহনগুলো খুব ধীরগতিতে চলাচল করছে। ওই সড়কে রিকশা চালান ফরিদ মিয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু পাশের এলাকাতেই রিকশার গ্যারেজ, তাই বাধ্য হয়ে এ ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশা চালাতে হয়। তবে এখন বেশির ভাগ চালকই এ রাস্তায় ট্রিপ পেলে যাত্রী নেয় না। প্রতিদিন আমি রিকশা উল্টে যেতে দেখি এবং নিজেও যাত্রী নিয়ে দুবার উল্টে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির এ রকম খারাপ অবস্থা। কেউ এটি ঠিক করেন না। রাস্তার পাশে খাবার হোটেলের মালিক আবদুল হাদী বলেন, কিছুদিন হলো দোকান ভাড়া নিয়ে আমি হোটেল বানিয়েছি কিন্তু এ রাস্তার পাশে হোটেল করা ভুল হয়েছে। না পারছি দোকান ছেড়ে দিতে, না পারছি ব্যবসা চালিয়ে যেতে। রাস্তা খুবই ভাঙাচোরা, গর্তগুলোতে পানি জমে থাকে। সে কারণে মানুষের যাতায়াত কম। ফলে খাবার হোটেলে খুব বেশি গ্রাহক পাওয়া যায় না। ভাঙা রাস্তা দিয়ে এসে কেউ হোটেলে খেতে চায় না। পাশাপাশি সব সময় রাস্তায় ধুলোবালি উড়তে থাকে। ফলে এখানে হোটেল করে মহাবিপদে পড়েছি।
রাস্তার পাশের ছয় তলা বাড়ির কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আমাদের এ বাসাসহ আশপাশের অন্য বাসাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অনেক ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
ভাড়াটিয়ারা এ এলাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছে না। আর যারা রয়েছেন তারাও বাসা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় চলাচলের অনুপযোগী, ভাঙা রাস্তাগুলোর ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এলাকাবাসীর সমস্যা নিরসনে এসব রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেব। লেকপাড়ের এ সড়ক উন্নয়নের ব্যাপারে আমি খুব দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করব।’