সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এ হামলা চালানো হয়। এ ২৫ মিনিটে মোট ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় এবং এগুলো জঙ্গিঘাঁটি, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কিছু স্থানে আঘাত হানে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, হামলায় ‘জঙ্গি ক্যাম্প’ হিসেবে উল্লেখ করা ৯টি স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং এ সময় জঙ্গি সংগঠন ‘জইশ’প্রধান মাসুদ আজহার পরিবারের ১০ জনসহ মোট ৭০ জন নিহত হয় বলে দাবি ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির। তবে পাকিস্তানের আইএসপিআর জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ৩১, আহত হয়েছেন ৫৭ জন। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা গোলাবর্ষণে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের ১৫ বাসিন্দা নিহত হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় হামলার সময় ৩টি রাফালসহ মোট ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এই সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেড সদর দপ্তরও ধ্বংস করা হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গতকাল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ শুরু করার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনী যে কোনো মুহূর্তে দ্বিতীয় দফা হামলা চালাতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার প্রথম প্রহরে মাত্র ২৫ মিনিটের অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গিঘাঁটিতে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত ৭০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করার দাবি করেছে ভারত। তবে ছয়টি স্থানে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের গোলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চালানো হয় অভিযান। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী যৌথভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ কোডনামে এ হামলা চালায়। এ বিষয়ে গতকাল নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত সীমান্তরেখা অতিক্রম না করেই নিজ দেশের মাটি থেকে পাকিস্তানে আঘাত হেনেছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে যে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, তার প্রতিক্রিয়াতেই এ আঘাত হানা হয়েছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পেহেলগামের হামলার জন্য দায়ী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, ‘গত তিন দশকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প এবং লঞ্চপ্যাড গড়ে তোলা হয়েছে। এ অভিযান ছিল সেই অবকাঠামো ধ্বংস করে ভবিষ্যতের হামলা রোধের উদ্দেশ্যে।’ সংবাদ সম্মেলনে বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং এ অভিযানের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সব লক্ষ্য সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’ এ সময় জানানো হয়, ভারত পাকিস্তানের যেসব এলাকায় হামলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহান আল্লাহ, মুরিদকে’র মারকাজ তৈয়বা, সরজল (তেহরা কালান), মেহমুনা জয়া সুবিধা (শিয়ালকোট), মারকাজ আহলে হাদিস বরনালা, ভিম্বার মারকাজ আব্বাস (কোটলি), মাসকার রাহিল শহীদ (কোটলি), মুজাফফরাবাদে শাওয়াই নালা ক্যাম ও মারকাজ সৈয়দনা বিলাল-৩। ভারত সরকার জানিয়েছে, এ সামরিক পদক্ষেপ ছিল নির্ভুল, পরিমিত ও অ-উত্তেজনামূলক এবং এতে কোনো পাকিস্তানি সেনা স্থাপনা লক্ষ করা হয়নি।
এদিকে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ দাবি করেছে, ভারতের বিমান হামলায় পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে সুবহান আল্লাহ মসজিদে বোমা পড়ায় জইশ-ই-মুহাম্মদপ্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের ১০ আত্মীয় ও তার ঘনিষ্ঠ চার সহযোগী নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আজহারের বড় বোন ও তার স্বামী, ভাগনে ও তার স্ত্রী, এক ভাতিজি এবং পরিবারের পাঁচ শিশুও রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আজহারের তিনজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাদের একজনের মা মারা গেছেন।
বিবিসির আরেক খবরে বলা হয়, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং ১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। বুধবার ভিডিও বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমানের মধ্যে ৩টি রাফাল, ১টি সু-৩০ এবং ১টি মিগ-২৯ এবং ১টি হেরন ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।’ তবে ভারত এখনো এ দাবি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জানান, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আরও ৪৬ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, বুধবার রাতের আঁধারে ভারতের ৭৫ থেকে ৮০টি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকা ও মসজিদ লক্ষ করে ভারতীয় বাহিনী এ হামলা করেছে।
বিবিসি জানায়, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাম্পোর অঞ্চলে একটি অজ্ঞাত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এটি কোন দেশের বা কোন মডেলের উড়োজাহাজ, তা সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পাঞ্জাবে একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, ভেঙে পড়া বিমানটি আকালি খুর্দ গ্রামসংলগ্ন এলাকায় পড়ে, যা ভাটিন্ডার ভিসিয়ানা বিমানঘাঁটি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। সেনাবাহিনী ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করছেন। এ ঘটনায় একজন নিহত ও নয়জন আহত হওয়ার খবর জানালেও যুদ্ধবিমানটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি তারা।
এদিকে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে হামলার কঠোর প্রতিবাদ জানাতে ভারতের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করার কথা জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারতের এ নির্লজ্জ আগ্রাসন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরনের কর্মকা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নিয়ে প্রতিষ্ঠিত নিয়মের পরিপন্থি। পাকিস্তান শত্রুতাপূর্ণ আচরণের জন্য ভারতের উদ্ভট যুক্তিগুলো দৃঢভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ এমন ‘বেপরোয়া’ আচরণ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতের ‘স্পষ্ট আগ্রাসনের’ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেছে তারা। পাকিস্তান বলেছে, ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে পাকিস্তান নিজস্ব পছন্দমতো সময় ও স্থানে এ আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।’ বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলার পর আতঙ্ক আর বিভ্রান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরের বাসিন্দা মুহাম্মদ ইউনুস শাহ জানান, তাদের শহরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমপ্লেক্সে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। প্রথম তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র একে একে দ্রুত এসে পড়ে, আর চতুর্থটি পড়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট পর। ওই কমপ্লেক্সটিতে একটি স্কুল, কলেজ, হোস্টেল, মেডিকেল ইউনিট এবং একটি মসজিদ রয়েছে। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ কমপ্লেক্সটির আবাসিক এলাকায়ও কিছু পরিবার বসবাস করত। হামলার পরপরই পুলিশ, দমকলকর্মী এবং উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তবে এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন অনেকেই সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদের কাছে বসবাসকারী মুহাম্মদ ওহিদ বলেন, ‘আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায়। ঘর কেঁপে উঠেছিল। আমি রাস্তায় বেরিয়ে দেখি আশপাশের মানুষজন জড়ো হয়েছে। এর মধ্যেই আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে। পুরো এলাকায় চরম বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’ জিও নিউজ ও ডনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক হয়। পরে বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের হামলা ‘উসকানিমূলক ও কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে ইসলামাবাদ বলেছে, এ ঘটনা কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র গতকাল সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। এই সঙ্গে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং পরিস্থিতি জটিল না করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাত নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উভয় দেশই আমাদের বন্ধুবৎসল রাষ্ট্র এবং আমরা চাই তারা শান্তিপূর্ণভাবে উত্তেজনা প্রশমিত করুক।’ রাশিয়া পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের সব রূপের নিন্দা জানিয়েছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সীমান্ত এলাকায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘এটা লজ্জাজনক, আমরা এই মাত্র এটি সম্পর্কে শুনলাম। আমার মনে হয় মানুষ বুঝতে পারছিল যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করছে। আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।’ এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্সে বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে ওয়াশিংটন।
এদিকে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতের সামরিক পদক্ষেপ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেছেন।
আরেক খবর অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ আব্বাস আরাগচি গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছেছেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে চলতি সপ্তাহেই আরাগচি ইসলামাবাদ সফর করেন, সেখানে তিনি পাকিস্তনের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন। তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সীমান্ত সহযোগিতা এবং দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ইরান মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের পক্ষে তাঁর মুখপাত্র বলেছেন, ‘ভারতের সেনা অভিযান আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে, এ নিয়ে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশের প্রতি সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।’ জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশিও উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। আমিরাতের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেছেন, ‘আমরা দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয় যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সংকট মোকাবিলায় কূটনীতি ও সংলাপই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।’
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেছেন, ‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার আমরা সমর্থন করি। নিরপরাধদের বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করেছে, তাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই।’
প্রতি ফোঁটা রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বললেন শাহবাজ শরিফ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারতের বিমান হামলায় নিহতদের প্রতি ফোঁটা রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর গত রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কাপুরুষ শত্রু, যারা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায় এবং নিজেকে শক্তিশালী ভাবে। আমরা গত রাতে প্রমাণ করেছি, পাকিস্তান জানে প্রতিরক্ষা করতে কীভাবে উপযুক্ত জবাব দিতে হয়। জাতি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাহস ও শক্তিকে শ্রদ্ধা জানায়।’
পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে শরিফ বলেন, ‘আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সবাইকে সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা অবশ্যই তাদের (ভারতের) বিরুদ্ধে দাঁড়াব এবং বিজয়ী হব।’