চার মাস পর ঢাকায় ফিরে বিশ্রামে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিশ্রামের পাশাপাশি কয়েক দিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। লন্ডন থেকে দীর্ঘ জার্নি করে দেশে আসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য এ পরামর্শ দিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। খালেদা জিয়া পূর্ণ বিশ্রামে থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণেই রয়েছেন। নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসকরা। গতকাল রাতেও চিকিৎসকরা বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। দেশে ফিরার পরও তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এসব তথ্য জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা রোস্টার করে বাসায় গিয়ে ম্যাডামকে দেখে আসছেন। আমিও রাতে গিয়েছিলাম। ম্যাডাম ভালো আছেন। বিশেষ করে মানসিক অবস্থাটা খুবই ভালো আছে। দ্য লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসা চলবে। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এজন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের দেখা-সাক্ষাতের ওপর আপাতত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের ভিড় এড়ানোর জন্য মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে এই নিষেধাজ্ঞা দেন। ফলে গত দুই দিনে তাঁর পরিবারের লোকজন ও নিকট আত্মীয়স্বজন ছাড়া তেমন কেউ বাসায় যাননি। তবে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তিনি খোশমেজাজে সময় কাটাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, লন্ডন ক্লিনিক থেকে ম্যাডামকে একটানা বসে না থেকে কিছুটা হাঁটাচলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা নিয়ম করে বাসায় ফলোআপ করে যাচ্ছেন। এগুলোর সমন্বয় করছেন প্রফেসর ডা. জাহিদ হোসেন। তিনি প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে কল করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে ম্যাডামের জন্য বাসায় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাই ও বোনের বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসা হচ্ছে। এদিকে দলের অনেকেই দলীয় প্রধানকে এক নজর দেখতে তাঁর বাসভবন ফিরোজার সামনে আসছেন। কিন্তু সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও স্মৃতি ধরে রাখতে কেউ কেউ সেই বাড়ির সামনে গিয়ে ছবি তুলছেন। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা মূল ফটক ও ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ সদস্যও বাসভবনের সামনে ও আশপাশে রয়েছেন। যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে ফেরেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান। এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেদিনই তাঁকে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এ হাসপাতালে টানা ১৭ দিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৫ জানুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে লন্ডনে তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় যান। ওই বাসায় থেকেই তিনি পরবর্তী চিকিৎসা নেন।
অভ্যর্থনা জানাতে আসায় ধন্যবাদ তারেক রহমানের : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার সময় সংবর্ধনা জানাতে সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে জনস্রোতের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দীর্ঘ চার মাস যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসার পর গুলশানের নিজ বাসভবন পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কের দুই পাশে জড়ো হওয়া লাখো মানুষ অভ্যর্থনা জানান খালেদা জিয়াকে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়াও ওই সময় সামরিক (সেনা, নৌ ও বিমান) বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, র্যাব ও এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্য যারা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।