পবিত্র কোরআনে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রাণ রক্ষায় লড়াইয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, সব ক্ষেত্রে যুদ্ধই একমাত্র সমাধান। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো, শান্তি প্রতিষ্ঠা। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম বরাবর শান্তিপূর্ণ সংলাপকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যতক্ষণ না শত্রুপক্ষ থেকে আগ্রাসন ও প্রতারণার আশঙ্কা থাকে।
যদি শত্রুপক্ষ সত্যিকার অর্থে নমনীয় হয়ে সংলাপের আহ্বান করে, তবে মুসলমানদের উচিত, তাতে সাড়া দেওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তারা সন্ধির প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তুমিও তার প্রতি ঝুঁকে পড়, আর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬১)
এই আয়াতে সন্ধির বিধান বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি শত্রুপক্ষ কোনো সময় সন্ধির প্রতি আগ্রহী হয়, তবে আপনারও তাই করা উচিত।
এর দ্বারা বোঝা যায় যে নিরাপত্তা সব সময়ই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। সুতরাং যদি তারা সন্ধিতে আগ্রহী হয়, তবে আপনার (মুসলমানদের) উচিত তাদের সঙ্গে সন্ধি করা। তা ছাড়া এর মাধ্যমে মুসলিমদের শক্তি সঞ্চিত থাকবে, পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। অনুরূপভাবে সন্ধির অন্য সুবিধা হচ্ছে, মানুষ যখন নিরাপদ হবে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন ইসলামের পাল্লা ভারী হবে।
কারণ, যার বিবেক আছে সে বিবেক খরচ করলেই বুঝতে পারবে যে ইসলামই সত্য।
যদি কোনো সম্প্রদায় সংলাপের মাধ্যমে শান্তি চুক্তিতে আসে, তখন মুসলমানদের উচিত, যতক্ষণ তারা সেই চুক্তি বজায় রাখবে, কোনো ধরনের প্রতারণার আশ্রয় না নেয়, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি, আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪)
ইসলাম এখানে যতটুকু সম্ভব সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
কারণ ইসলামের মূল উদ্দেশ্যই হলো শান্তি বজায় রাখা। হ্যাঁ যদি শত্রুপক্ষ সীমা লঙ্ঘন করে, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, তখন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অবশ্যই মুসলমানদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সঙ্গে সরলভাবে থাকে, তোমরাও তাদের সঙ্গে সরলভাবে থাকবে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সংযমশীলদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৭)
এবং একান্ত প্রয়োজনে শত্রুপক্ষের মোকাবেলা করার সময় কোনো ধরনের সীমা লঙ্ঘন করা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯০)
এই আয়াতে প্রথমবার সেই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। আর ‘সীম লঙ্ঘন করো না’-এর অর্থ হলো, শত্রুর আঙ্গিক বিকৃতি ঘটিয়ো না, নারী, শিশু এবং এমন বৃদ্ধকে হত্যা করো না, যারা যুদ্ধে কোনো প্রকার অংশগ্রহণ করেনি। অনুরূপ গাছপালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং কোনো অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু হত্যা করা ইত্যাদিও সীমা লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে, যা থেকে বিরত থাকতে হবে। (ইবনে কাসির)
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছে, দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন