সারাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত, ঠিক সে সময়েও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। বিজয়ের তিনদিন পর (১৯ ডিসেম্বর) প্রচন্ড যুদ্ধের মাধ্যমে ভাটিয়াপাড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধারা। এই দিন মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকবাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ষ্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে। আত্মসমর্পনে বাধ্য হয় পাক হানাদাররা।
দিবসটি পালন উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০ টায় কাশিয়ানী উপজেলার রেলওয়ে মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের মে মাসে ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ষ্টেশনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো সময়টায় ৬৫ জনের শক্তিশালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে পাক বাহিনী হত্যা করে ভাটিয়াপাড়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়েছে।
ভাটিয়াপাড়ার পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি দখল নিয়ে ৬ই নভেম্বর দুটি মারাত্মক যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা ও বাবুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী টানা ১৫ ঘন্টা পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘায়েল করতে পাক বাহিনী আকাশ পথে গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। কিন্তু, সেদিন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেনি। এ যুদ্ধে মিন্টু মিয়া, সাধুহাটির জয়নাল ও রামদিয়া এস কে কলেজের ছাত্র ইয়াসির শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১৯জন পাক সেনা ও তাদের ৫ দোসর নিহত হয়। এই ওয়্যারলেস ক্যাম্প দখল নিয়ে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধ হয় ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে।
তিনদিন যুদ্ধের পর ১৯শে ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল জেলার দিক থেকে ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর মঞ্জুর, নড়াইল জোনের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা, লে. কর্ণেল জোয়ান, কামাল সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে ক্যাপ্টেন ইসমত কাদির গামা ও বাবুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়ার মিনি ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে কামাল সিদ্দিকী আহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে ১৯শে ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডারের কাছে শতাধিক দোসরসহ পাক হানাদাররা আত্মসর্মপন করে।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ ডিসেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ