ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মালেক। তিনি তার অনুগত কিছু লোক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী পরিবারের সন্তান মাসুদুর রহমান মল্লিককে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মাসুদুর রহমান মল্লিককে মনোনীত করে তা অনুমোদনের জন্য জেলায় পাঠায়। জেলা নেতৃবৃন্দ সুপারিশ সহকারে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠান। তৃণমূল ও জেলা নেতৃবৃন্দের সুপারিশ মেনে প্রধানমন্ত্রী চেয়ারম্যান পদে মাসুদুর রহমান মল্লিককে মনোনয়ন দেন।
সে হিসেবে মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে মাসুদুর রহমান মল্লিক আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী। নিয়ম অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত প্রার্থী মাসুদুর রহমান মল্লিকের পক্ষে কাজ করার কথা। তাছাড়া গত ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ময়জুদ্দিন হামিদের সভাপতিত্বে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজের বাসভবনে আগামী ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওই সভার অঙ্গীকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মালেক চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগে বিএনপির প্রার্থী আবদুল লতিফ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসুদুর রহমান মল্লিক এলাকার একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি এবং বংশ পরম্পরায় আওয়ামী পরিবারের সন্তান। এর আগে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে ৩ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন মাসুদ মল্লিকের ফুফা মশিউর রহমান তরফদার। তাছাড়া বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নওশের মল্লিক মাসুদুর রহমান মল্লিকের আপন চাচা। তিনি গত ৩৬ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। এই রাজনৈতিক পরিবারের পুরনো ঐতিহ্য স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে বিলীন হতে চলেছে। এর প্রধান কারণ নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে স্থানীয় ভোটারদের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, মাসুদ মল্লিকের পিতা লুত্ফর রহমান মল্লিক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৭৮ সালে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭৯ সালে থানা সভাপতির দায়িত্ব পান। ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ে যে সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ওই নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু এক ভোটে হেরে যান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এর মাঝে ১৯৭৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মাসুদ মল্লিকের পিতা লুত্ফর রহমান মল্লিককে জিয়াউর রহমানের আমলে বোমা মেরে হত্যা করা হয়, শুধু তার জনপ্রিয়তার কারণে। আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যিনি জড়িত ছিলেন, সেই বিএনপি নেতা আবদুল লতিফ বর্তমানে মাসুদ মল্লিকের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আবদুল লতিফের সুবিধা করে দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে মাসুদ মল্লিকের মাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৮০-৮১ সালে থানা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ সালেও ওই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোটার আব্দুল জলিল জানান, মাসুদুর রহমান মল্লিক একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তিনি নির্বাচিত হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মালেকের অভিযোগ, প্রার্থী বাছাইয়ে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। তাই আমি নৌকা প্রতীক পাইনি।’ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বহিষ্কার করা হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে তিনি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ভোটারদের অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাসুদুর রহমান মল্লিক জানান, ‘দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এলাকার জনগণ আমার সাথে আছে। আমি আশা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। সেটা করলে অবশ্যই আমি বিজয় লাভ করতে পারবো।’
বিডি-প্রতিদিন/৯ মার্চ ২০১৬/শরীফ