নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে স্কুল পড়ুয়া এক অনাথ শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা আপস-মীমাংসায় এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। বিশেষ একটি মহল ওই কিশোরীর অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও ম্যানেজ করে প্রাথমিক পর্যায়ে ধামাচাপা দিলেও গোটা এলাকায় খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। সেইসাথে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। গত ২৪ এপ্রিল মোহনগঞ্জ উপজেলার বরান্তর গ্রামের হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ওই শিশুটির বাড়ি হাটনাইয়া গ্রামে এবং সে গ্রামে। সে হাটনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। মা-বাবা জীবিত না থাকায় প্রায়ই তার মামার বাড়ি পার্শ্ববর্তী খালিয়াজুরি উপজেলার লেপসিয়া গ্রামে থাকতো। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে তার নানী শিশুটিকে নিয়ে হাটনাইয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। একপর্যায়ে বরান্তর বাজারে আসার পর জানতে পারে তাদের এক আত্মীয় বরান্তর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ফুল মিয়া মোহনগঞ্জ যাবে। এতে করে শিশুটিকে হাটনায়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয় ফুল মিয়া। পরে গজারিয়া নদী পার হওয়ার পর ফুল মিয়া (৪৫) শিশুটিকে জোরপূর্বক একটি ধানক্ষেতে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় তার আর্তচিৎকারে হাওরের শ্রমিকরা জড়ো হলে অনাথ এ শিশু কান্নাকাটি শুরু করে তাদের ঘটনাটি খুলে বলে। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনা মোহনগঞ্জ, বরান্তর, লেপসিয়া, করাচাপুর, গাগলাজুর, হাটনাইয়া, সুয়াইরসহ বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সবার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বরান্তর ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিক চৌধুরী, শাহ আলম ও পশ্চিমপাড়ার জিয়াউদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ফুল মিয়া একের পর এক নারী কেলেংকারির ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। এর আগেও সে বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটিয়ে জরিমানা দিয়েছে। তারপরও তার শিক্ষা হয়নি। তারা বলেন, অনাথ একটি শিশুর সাথে এমন ঘটনা বরদাস্থ করার নয়। বিশেষ একটি মহল বারবার আপস করে দেয়ায় কোনো ঘটনাই আইনের দুয়ারে যাচ্ছে না।
এদিকে, ঘটনাটি সর্বত্র জানাজানি হয়ে গেলে নিজেকে রক্ষায় বিশেষ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে ফুল মিয়া। বরান্তর গ্রামের দু’একজন ও হাটনাইয়া গ্রামের জনৈক কয়েস চৌধুরীসহ কয়েকজন ঘটনাটি আপসের দায়িত্ব নেন। গত ২৭ এপ্রিল তারা বিষয়টি মেয়েটিকে কিছু টাকার বিনিময়ে আপস করে দেন। এ খবরে হাওরাঞ্চলের সুশীল সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনা জানাজানির পরে ফুল মিয়ার একের পর এক অপকীর্তি বেরিয়ে আসতে থাকে। এ ব্যাপারে ফুল মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ মে, ২০১৬/ আফরোজ