উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে একটিও মানসম্মত আধুনিক মিলানায়তন নেই । বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে তাই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আয়োজকদের। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনগুলো উপযোগী মিলনায়তন সংকটের কারণে তাদের প্রযোজনা পরিবেশন করতে পারছেনা। এই সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে জেলা শহরে । উপজেলা শহরগুলোতেও একই অবস্থা ।
পঞ্চগড় জেলা শহরে মিলনায়তন রয়েছে মাত্র দুটি। সরকারি অডিটোরিয়াম এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন। সামরিক সরকার এরশাদের সময় সরকারি অডিটোরিয়ামটি নির্মিত হয়। তার পরে আর কোনদিন এই মিলনায়তনটি সংস্কার করা হয়নি।
বর্তমানে ৪’শ আসনের এই মিলনায়তনের প্রত্যেকটি আসনেই রয়েছে ছাড় পোকার নিরাপদ বসবাস। আলো ও সাউন্ড প্রুফ না হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী এই মিলনায়তন। গ্রীনরুম গুলোতে নেই আধুনিক ব্যবস্থা । মিলানায়তনটি নির্মাণের সময়েই রয়ে গেছে নানা ধরনের ত্রুটি । সাউন্ড বা আলোর কোন ব্যবস্থা নেই ।
এদিকে পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনের চেহারাও একই রকমের । প্রায় ৩’শ আসনের এই মিলনায়তনের মূল মঞ্চেই রয়েছে ফাটল । দর্শকের বসার জন্য প্লাষ্টিকের আসনগুলো মেঝের সাথে সিমেন্ট দিয়ে লাগানো। ফলে মুভিং করার কোন উপায় নেই । অনেক আসন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ।
পুরোনো আমলের একটি সাউন্ড সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময়েই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। লাইটের ব্যবস্থা নেই। তাপানুকুল না হওয়ায় অনেকগুলো ফ্যানের শব্দ যে কোন অনুষ্ঠানকে বিঘ্নিত করে। এই মিলনায়তনটিতে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। গ্রীণরুমগুলোতে আধুনিক কোন ব্যবস্থা নেই ।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় অচিরেই ভারত, চীন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশের মধ্যে পাঁচ দেশীয় সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠবে এই জেলা। এখানে দ্রুত ঘটছে পর্যটন শিল্পের প্রশার। দেশ বিদেশ থেকে ভ্রমণে আসছে পর্যটকরা। গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা, চা বাগান। দেশের বৃহৎকোম্পানীগুলো এই জেলায় তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে। তাই অচিরেই এইজেলায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মিলনায়তন দরকার ।
এ ব্যাপারে জেলা চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি আবুল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘সেমিনার বা শিল্পউদ্যোক্তাদের নিয়ে কোন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ আয়োজন করার মতো এখানে মিলানায়তন নেই । চতুর্দেশীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন করার ইচ্ছে থাকলেও মিলনায়তন সংকটের কারণে উদ্যোগ নিতে পারছিনা। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পঞ্চগড়ের নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা তাই মিলনায়তন দুটি অচিরেই ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন। নাট্যকর্মী আবুল বাসার জানান, ‘দুটি মিলনায়তনের নির্মানকৌশল একেবারে সেকেলে। এগুলোতে নাটক দুরে থাক সাধারণ কোন অনুষ্ঠানও করা যায়না। মিলনায়তন দুটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা জরুরী । নাট্যসংগঠন ভ’মিজের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আধুনিক মিলায়তন নির্মিত হলে এই জেলার সবাই উপকৃত হবে। দর্শক সংস্কৃতিকর্মী সবাই এর সুফলভোগ করবে। মিলনায়তন ভারা দিয়ে সরকারও রাজস্ব পাবে। তাই মিলনায়তনগুলি আধুনিক ভাবে নির্মাণের প্রয়োজন। ’
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলা শহরগুলোতে ছোটখাট মিলনায়তন থাকলেও মান সম্পন্ন নয় । ১ শ থেকে ২শ আসনের এসব মিলনায়তনে আধুনিক কোন সুযোগ সুবিধাই নেই। নেই আলোর ব্যবস্থা নেই শব্দযন্ত্র। সাউণ্ডপ্রুফও নয় এই মিলনায়তনগুলো । তেঁতুলিয়া উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালনায় ৭'শ আসন বিশিষ্ট একটি মিলনায়তন নির্মিত হলেও নির্মান পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকায় কোন কাজেই আসছেনা এই মিলনায়তন ।
উপজেলা শহর থেকে একটু দুরে মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হলেও মিলনায়তনটি নির্মাণের সময় আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়নি। তাই কোন কাজেই লাগছেনা এই মিলনায়তন । তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন জানান,‘তেঁতুলিয়া উপজেলা নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি মাসে সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ প্রায় ১০/১৫ দিন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হয় এই উপজেলার আয়োজকদের। কিন্তু ভাল কোন মিলনায়তন নেই বলে আয়োজকদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।’
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন,‘ মিলনায়তনগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধাও নেই। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ মে, ২০১৬/ হিমেল-০১