সাভারে দেশের বৃহত্তম বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস। কালের পরিক্রমায় এ বেদেরা তাদের আদি পেশা ছেড়ে ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। আইনি বাধ্যবাধকতা, নগরায়নসহ নানা কারণে এ পেশা ছেড়ে চাকুরি কিংবা ব্যবসায় জড়িত হচ্ছেন তারা। নদ-নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় তারা যাযাবর জীবন-যাপন ছেড়ে ঘর বাধছেন ডাঙ্গায়। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সন্তানদের দিচ্ছেন স্কুলে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আবরণের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন লোকালয়ে। বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে আত্মীয়তা করছেন অন্যান্যদের সাথে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাভারের ঐতিহ্যবাহী বংশী নদীর তীরঘেঁষা গ্রাম রাজফুলবাড়ীয়া পানপাড়া বাইজুড়ী এলাকার ও বক্তারপুরে দেড় শতাধিক বেদে পরিবারের বসবাস। প্রায় ১শ' বছর পূর্বে ৩/৪টি বেদে পরিবার নৌকা ছেড়ে অস্থায়ীভাবে এখানে থাকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। নৌকায় জীবনযাপনের মতোই এখানেও চালু হয় সরদার প্রথা। বেদেরা জমি ক্রয় করে থাকতে শুরু করেন স্থায়ীভাবে। সাপ বিক্রি, সাপের খেলা দেখানো, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি অনেকের প্রধান পেশা। বর্তমানে পেশা ছেড়ে ফিরতে শুরু করেছে স্বাভাবিক জীবনে। করছেন চাকুরী বা ব্যবসা। সন্তানকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় উপযুক্ত গড়ে তুলতে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন । তারা এগিয়ে চলছেন আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে।
সাভারে বেদে সম্প্রদায়ের ৩টি গ্রামের মধ্যে একটি পানপাড়া। এ পাড়ায় বেদেরা প্রথম বসবাস শুরু করেন। যেখানে আগে প্রতিদিনই ছোট-বড় নানা জাতের সাপ বেচাকেনার হাট বসতো। ক্রেতা আর বিক্রেতারা প্রধানত বেদে সম্প্রদায়ের সাপুড়ে। এদের সাথে যোগ হতো কোরিয়ান নাগরিকসহ বিদেশিরাও। ময়মনসিংহ, শেরপুর ও মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার গারো উপজাতি এবং উত্তরাঞ্চলের সাঁওতাল উপজাতির লোকজনও বাড়তি রোজগারের জন্য এ হাটে সাপ বিক্রি করতে আসতেন। বিক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। ১০ থেকে ১২ জন বেদে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি বিভিন্ন জাতের সাপ বিক্রি করে করতো। সাপের জাত বুঝে বিভিন্ন দামে সাপ বিক্রি করা হতো। এর মধ্যে গোখরো সাপ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, দাঁড়াশ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, অজগর ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। লাউডগা, কেউটে, কালনাগিনী, দু’মাথাওয়ালা সাপ, কাটা দুবল ও শঙ্খিনী সাপের দাম বেশ ওঠানামা করে।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বাক্সভর্তি সাপ নিয়ে বেদেরা রাস্তার দু’পাশে এসব সাপ বিক্রি করতো। কিন্তু সাপের বেচা-কেনার উপর আইন তৈরিতে এ পেশাও ছেড়েছেন অনেকে। এ ছাড়া নগরায়ন ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার প্রভাবে ঝাড়ফুক, সাপের খেলা ও সিঙ্গা লাগানোর চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায়ও এখন আর থাকতে চাচ্ছেন না অনেকে। এখানকার অধিকাংশ বেদেই এখন শ্রমজীবী কিংবা কর্মজীবী। এখন তারা যাযাবর জীবন ছেড়ে প্রচলিত সমাজে চলে আসছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ মে, ২০১৬/ আফরোজ