শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামে পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। দুইদিনের ভাঙনে গ্রামগুলোর ৪ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ‘শ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে একটি বাজারের ৮০টি দোকান। বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর পানিউন্নয় বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সাত দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার পদ্মা নদীর ভাঙনে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের দুই‘শ পরিবার, বড়কান্দি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ৭৫টি পরিবার ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোর প্রায় পাঁচ‘শ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আশ্রয়ের জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বিলাশপুর ইউনিয়নের সুরত খারকান্দি জগৎজননী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি গত বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তারপর একটি টিনের ঘর তৈরিকরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হতো। কিন্তু গত বুধবার ওই টিনের ঘরটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কুন্ডেরচর ইউনিয়নের খাজুর তলা বাজারটি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। নদীতে স্রোত, ভাঙনের তীব্রতা থাকায় প্রতিদিনই কিছু অংশ নদীতে বিলীন হচ্ছে। এখন ভাঙতে ভাঙতে নদী বাজারের নিকটে চলে আসায় ৮০টি দোকান বিলীন হওয়ায় হুমকিতে রয়েছে।
কুন্ডেরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোতালেব মাদবর বলেন, গত দুই দিন যাবৎ পদ্মার ভাঙনের তীব্রতা বেশি। আমার ঘর-বাড়ি এবং ফসলী জমি বিলীন হয়ে গেছে। খাজুরতলা বাজারটি যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বিলাশপুর ইউপির কাইজ্জারচর গ্রামের জালাল আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বসত ভিটা ফসলি জমি সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে এখন খোলা আকাশের নীচে থাকতে হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুলকাদের বলেন, জাজিরার অধিকাংশ এলাকা পদ্মা নদীর চর। প্রতিবছর এ অঞ্চলে নদী ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাঙন কবলিতদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। তাদের যাতে পানি ও ঔষধের সংকট না হয় তার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঠে কাজ করতে নিদের্শ দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর পাউবির নির্বাহী প্রকৌশলী একে এম এনামুল হক বলেন, জাজিরা, নড়িয়া ও শরীয়তপুর সদরের কয়েকটি এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে আমরা কাজ শুরু করব। তবে এই মুর্হূতে ভাঙনরোধ করার জন্য কোন বরাদ্দ শরীয়তপুর কার্যালয়ে নেই।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ জুলাই, ২০১৬/মাহবুব