বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জে পানিবন্দী মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাটবাজার তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো বাস করছে গরু-ছাগলের সাথে। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় তাদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। একটু মুঠো চালের জন্য হাহাকার করছে পানিবন্দি মানুষগুলো।
সরেজমিনে বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌকাযোগে ১০ মে.টন চাউল নিয়ে নয়টি ওয়ার্ডে বিতরনের জন্য যান। প্রথমে আঘুরিয়া গ্রামে যাওয়া। এ সময় এক মুঠো ত্রাণের জন্য প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কিন্তু বরাদ্দ কম। তাই নৌকা থেকে জনপ্রতি দুতিন কেজি করে ত্রাণ দিয়ে দ্রুত আসতে হয়। এ সময় একমুঠো ত্রাণের জন্য শত শত নারী-পুরুষকে গলা পানি পর্যন্ত নামতে দেখা যায়।
কথা হয় শিউলি বেগমসহ অনেকের সাথে তারা আক্ষেপ করে জানান, প্রায় দশদিন ধরে পানিবন্দি। ঘর ছেড়ে এসে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। আয় রোজগার নেই। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে। চাউল দেয়ার কথা শুনে ছুটে এসেছি। কিন্তু আমার ভাগ্যে একফোটা চাউলও জুটলো না। এক মুঠো চাউলের জন্য গলা পানি পর্যন্ত নেমেছি। তাও কপালে জুটলো না। একই অবস্থা ঠাকুরপাড়া, আজুগড়ার আরও কয়েকটি পয়েন্টে। অনেককে বাশের ভেলা ও নদী সাতরিয়ে ত্রাণ নিতে আসতে দেখা যায়। কিন্তু কারো ভাগ্যে জুটেছে আবার কারো ভাগ্যে জোটেনি। একই অবস্থা সিরাজগঞ্জ সদরের কাওয়াকোলা, মেছড়া, কাজিপুরের মাইজবাড়ী ও খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের।
ইউপি চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ জানান, রাজাপুর ইউনিয়নের ৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা যে ত্রাণ পেয়েছি তা অতি নগন্য। ত্রান না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রুত পর্যাপ্ত ত্রান সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, বেলকুচি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। যে পরিমণি ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাকে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন জানালেন, এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষ টাকা ও ৩৭০ মে.টন চাল বিতরণ ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকলকে ত্রাণের আওতায় নানা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ