মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবে- এমন আশা প্রতিটা মা-বাবার মনেই থাকে। যদি কিছু বিসর্জন দিতে হয়, তা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না তারা। কিন্তু যৌতুক দিতে না পারায় মেয়ের উপর যখন নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ, তখন অসহায় পিতার দু'চোখের পানি ফেলা ছাড়া অন্য কোন গতি থাকে না। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নীলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলায়। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মেয়ে। টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না ভ্যানচালক পিতা দুলাল মিয়া।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের যমগ্রমের বাসিন্দা গরীব ভ্যানচালক মো. দুলাল মিয়া। তার ৩ মেয়ে। বড় মেয়ে দুলালী বেগমকে ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিয়ে দেন নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ৬ নম্বর ইউনিয়নের শুটবাড়ী গ্রামের এলাহী মিয়ার ছেলে ও মোটর পার্টসের দোকানের কর্মচারী রবিউলের সাথে। কথা ছিলো ৭১ হাজার টাকা যৌতুকবাবদ দে্ওয়া হবে। ওই সময় দুলাল মিয়া ধারদেনা করে ৩১ হাজার টাকা মেয়ে জামাই রবিউলের হাতে তুলে দেন। বাকী টাকা ৪ মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এরই মধ্যে ধারদেনা করে আনা ৩০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়ায় তিনি পড়েন বিপাকে। তিনি পুনরায় টাকা সংগ্রহের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু এতো টাকা যোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
দুলাল মিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কাছে আরও কিছুদিন সময় চান। কিন্তু মেয়ে জামাই রবিউল হুমকি দিতে থাকেন এবং দুলালী বেগমের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। তার মেয়েকে যেন নির্যাতন করা না হয় তার জন্য তিনি তাদের পায়েও ধরেন কিন্তু দুলালী বেগমের উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। টাকা দিতে না পারায় গত ৭ মাস যাবত মেয়ে দুলালীকে বাবার বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। দুলাল মিয়া মেয়েকে নির্যাতন থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন লোকজনের হাতে পায়ে ধরলেও নির্যাতন অব্যাহত থাকে।
ভ্যানচালক দুলাল মিয়া বলেন, মেয়ের সুখের জন্য আমি সব কিছু করবো। কিন্তু টাকার জোগাড় করতে হলে সময় দরকার । জামাইয়ের কাছে সময় চাইলেও সে সময় দিতে নারাজ। বিনিময়ে সে মা-মাসি তুলে গালিগালাজ করে এবং হুমকি দিয়ে বলে টাকা না দেয়ার শোধ তোলা হবে তোর মেয়ের উপর দিয়ে। এ অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া কেউ আমার মেয়েকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ যেন দুলালীকে বাঁচান এ বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ