জুলাই বিপ্লব দমনে মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের মামলায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামীকাল শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন। এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পতিত স্বৈরাচারের, বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল দিনটিতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সারা দেশ থেকে কর্মীদের ঢাকামুখী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেও বিক্ষিপ্ত ঝটিকা মিছিল, ভাঙচুর, আগুনের তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা। বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন ও প্রাইভেট কারে আগুন দিয়ে, নানা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা চালিয়ে, তারা অস্তিত্ব ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। সোমবার গভীর রাতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিলে ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক পুড়ে মারা যান। হঠাৎ বেড়েছে এই চোরাগোপ্তা হামলা। দেখা যাচ্ছে, হেলমেট বা মাস্ক পরা দুর্বৃত্তরা বাইকে এসে আগুন দিয়ে বা ককটেল ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাজধানীর বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সেগুলোতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে জনসাধারণের মনে। নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দিয়ে, পুলিশ প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দেয়। রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৩৪ নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কার্যক্রমের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যখন এ কলাম লেখা হচ্ছে, তার আগে-পরে অনাকাঙ্ক্ষিত নাশকতার আরও ঘটনা-দুর্ঘটনা, আগুনসন্ত্রাস ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে এমন অনেক আগুনসন্ত্রাসে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা জাতির মনে শোকস্মৃতির দগদগে ক্ষত হয়ে আছে। সেজন্যই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সচেতন মানুষের কপালে। জনগণের এ উৎকণ্ঠা দূর করতে বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকা সেনাবাহিনীসহ আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়াও সরকারের কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা দমনে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ তাদের পেশাগত ও নৈতিক কর্তব্য।