বগুড়ার মহাস্থানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী আনিছার রহমান রনজু (৪২) হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্যই চার বন্ধু মিলে ছুরিকাঘাতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। নিহত আনিছার সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের রহমতবালা গ্রামের মফিজ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে।
হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ইফতেখার আলম বিশাল (২১) শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো: কামরুজ্জামানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিশাল শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান পূর্বপাড়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে।
আদালতে জবানবন্দিতে বিশাল জানান, তিনিসহ চারজন যথাক্রমে আকাশ মন্ডল, নবিরুল ইসলাম ও আবদুর রউফ রয়েল নেশার টাকা যোগাড়ের করার জন্যই আনিছারের পথ রোধ করে টাকা ছিনতাইয়ের পর ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
শিবগঞ্জ থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, ২৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী ও সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম দুলুর ভাগ্নে আনিছুর রহমান রনজু বাইসাইকেলে যোগে মহাস্থান বন্দর থেকে মহাসড়ক হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এমন সময় মহাস্থান ব্রীজের উপরে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তার গতিরোধ করে পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে নগদ আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পর দিন আনিছারের স্ত্রী শিল্পী বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৫ নভেম্বর তিনজনকে মহাস্থান থেকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন, উপজেলার নাগরকান্দি গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে আব্দুর রউফ রয়েল (৩০), মাহফুজার রহমানের ছেলে আকাশ মন্ডল (২০) ও মৃত আনছার আলী ছেলে নবিরুল ইসলাম (২২)। তাদের কাছ থেকে পুলিশ কোনো তথ্য না পেয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। দীর্ঘদিন পর ২৬ ডিসেম্বর উপজেলার মহাস্থান বাজার নাপিত শাহীনুর রহমানকে প্রকাশ্য দিনের বেলায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শাহীনের বাবা বাদি হয়ে ইফতেখার আলম বিশাল ও তার বাবা আজিজুল হকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলায় দায়েরের ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে আসামি বিশালকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। পরে ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালালে বিশাল আনিছার হত্যার পুরো ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
শিবগঞ্জ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, বর্তমানে সব আসামিই জেল হাজতে রয়েছে। খুব শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হিমেল