ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধোপাডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইমরুল কবীর ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথের বিরোধের জের ধরে স্কুলে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেই চলেছেন। এ দু’জনের বিরোধের কারণে স্কুলের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। স্কুলের বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মনে করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অদক্ষতার কারণে স্কুলে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অহেতুক নানা বির্তকের সৃষ্টি করে সভাপতি প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে দেবার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের অভিভাববকদের সাথে কথা বলে এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে বেশ সুনামের সাথেই চলছিল। সাম্প্রতিক সময়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন হবার পর থেকে স্কুলটিকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু হয়। স্কুলটিতে নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব দেখাতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবীরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ। স্কুলের নিয়ম বর্হিভুত কাজে বাধা দেবার কারণেই প্রধান শিক্ষকের উপর নাখোশ হন যশোদা জীবন দেবনাথ। এরই অংশ হিসাবে তিনি প্রধান শিক্ষকের উপর নানা অপবাদ দিয়ে স্কুল থেকে বিদেয় করায় পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরুল কবীর অভিযোগ করে বলেন, যশোদা জীবন অপকৌশলে নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে ‘এডহক’ কমিটির সভাপতি হন। ভুয়া ‘ছাড়পত্র’ দিয়ে ত.ম মাসুদ পারভেজের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে তাকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচন করার সুযোগ করে দেন। ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি পরিশোধের টাকা দিয়ে ৯ জনকে দাতা ভোটার বানিয়েছেন। স্কুলের নিজস্ব জায়গায় সভাপতি তার প্রাইভেট কেজি স্কুলের ঘর নির্মাণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধের টাকায় নির্মিত ভবন সমূহে নিজের নামফলক লাগিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বেতন ফ্রি করে দেবার আশ্বাস দিয়ে অভিভাবকদের সাথে প্রতারণা করে পক্ষের লোকদের বিজয়ী করেন কিন্তু পরবর্তীতে বেতন ফ্রি না করে স্কুলের দ্বিতল ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই আশ্বাস পূরন করেননি। সকল রুমে সিসি ক্যামেরা দেবার কথা থাকলেও তা দেননি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে দিয়ে এবং ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যদের ম্যানেজ করে নিন্মমানের ‘নোটবই’ বিক্রির সুযোগ দিয়ে একটি প্রকাশনীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে তিনি স্কুলের কয়েক শিক্ষককে বিদ্যালয়ে কোচিং বাণিজ্যের সুযোগ দিয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভা করার ক্ষেত্রে তিনি কোন নিয়ম নীতির ধার ধারেননা। নিজের বাড়ী অথবা ঢাকায় বসেই ম্যানেজিং কমিটির সভা করেন। তাছাড়া নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রধান শিক্ষককে ব্যবহার করতে চান।
এদিকে, প্রধান শিক্ষকের এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, বিগত দিনে স্কুলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। আমি ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব নেবার পর থেকে স্কুলের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছুই করেছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই সে আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দেবার চেষ্টা করছে। স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষকের অপসারন চেয়েছেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের বেশকিছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, একসময় স্কুলটি বেশ সুনামের সাথেই চলছিল। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বেশকিছু সদস্য স্কুলটিকে নিয়ে রাজনীতি করছেন। ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্বক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। যে কোন সময় স্কুলটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রধান শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির। স্কুলটির সুনাম ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন