পরিবারে স্ত্রী সন্তান সবাই রয়েছে। তবুও ঠাঁই নিতে হয়েছে সরকারী হাসপাতালে। বৃদ্ধ হওয়াটাই যেন শতবর্ষী মনতাজ আলীর সবচেয়ে বড় অপরাধ! ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে সব থাকার পরও তার জোটেনা কোন খাবার। নেই কোন আশ্রয়। বৃদ্ধ হওয়ায় মনতাজ আলীর ঠাঁই হয়নি পরিবারের কাছে। সোমবার রাতে সিংড়া থানার গেইটের সামনে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ মনতাজকে অসুস্থ অবস্থায় পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মী উদ্ধার করে সিংড়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ মনতাজ আলী জানান, বৃদ্ধ হওয়ায় স্ত্রী ও ৫ ছেলে-মেয়ের কেউ যেন তার আর দায়িত্ব নিতে চায় না। বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়া মনতাজকে তাই তারা রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। বড় ছেলে আব্দুল আজিজ মরুর নিংগইন পেট্রোল পাম্পের পার্শ্বে খাবারের হোটেল রয়েছে। সেখানে খাবারের কোন অভাব নেই। তবুও তার ঠাঁই হয়নি সেখানে।
বৃদ্ধের প্রতিবেশী ছবেজান বেওয়া ও হাসিনা বেগম জানান, শহরের চাদপুর এলাকায় ওই বৃদ্ধ তার পরিবারের সাথে থাকতেন। সোমবার বিকেলে সিংড়া শহরের স্থানীয় বাংলালিংক মোবাইল টাওয়ারের পাশে শতবর্ষী এই বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। পরে তারা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে ভ্যান যোগে বড় ছেলে আব্দুল আজিজ মরুর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কেউ তাকে আশ্রয় দিতে চায় না। মরুর ছেলে শুভ হোসেন তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পরে বৃদ্ধের মেয়ে মোমেনা বেগম ও মেজ ছেলে মোস্তাকের বাড়িতে নিয়ে গেলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের হননি। পরে রাত ৮টায় ওই বৃদ্ধকে সিংড়া থানার গেটে ফেলে রেখে চম্পট দেয় ভাড়া করা ভ্যান চালক।
এদিকে খবর পেয়ে সিংড়া থানার উপ-পরিদর্শক শাহেদ আলী ও স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সাইফুল ইসলাম অসুস্থ শতবর্ষী মনতাজ আলীকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। থানা থেকে রাতেই ওই বৃদ্ধের ছেলেদেরকে খবর দেয়া হলেও তারা হাসপাতালে দেখা করতে আসেনি।
হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীরা জানায়, দিনভর কেউ তার সাথে দেখা করতে আসেনি। হাসপাতাল ও রোগীরা তার খাবারের ব্যবস্থা করেছে। অন্য রোগীরাও তাকে খেতে দিয়েছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মনোয়ারা বেগম জানান, এই বৃদ্ধের আত্মীয় স্বজনের এখন পর্যন্ত কোন খোজ নেই। চিকিৎসার সেবার পাশাপাশি সকালে হাসপাতাল থেকে একটি রুটি, কলা ও ডিম দেয়া হয়েছে।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন শতবর্ষী বৃদ্ধকে রাতে রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া অমানবিক বিষয়। ওই বৃদ্ধের ৪ ছেলেকে থানায় দেখা করার জন্য খবর পাঠানো হয়েছে। তারা না আসায় পুলিশও পাঠানো হয় তার ছেলেদের ঠিকানায়। কিন্তু পাওয়া যায়নি। তারা তার বাবার দায়িত্ব না নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল