বাগেরহাটের শরণখোলায় দুটি ডকইয়ার্ডের শতাধিক শ্রমিক তাদের কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কায় পড়েছে। উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার পূর্বমাথায় অবস্থিত ওই ডকের জমি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন বেড়িবাধের আওয়াতাভুক্ত হওয়ায় ডক দুটি বন্ধ হওয়া উপক্রম হয়েছে। ফলে ওই ডকের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। তাছাড়া, ডকইয়ার্ড না থাকলে এ এলাকার বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা পড়বে চরম সংকটে। বিরূপ প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে। এসব দাবিতে ডকশ্রমিকরা মঙ্গলবার দুপুরে রায়েন্দা বাজারে মিছিল শেষে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন জানিয়েছে।
জানা গেছে, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের সর্ব দক্ষিণে শরণখোলার মানুষ বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য ও বনজ এই দুই প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করেই তাদের জীবীকা নির্বাহ করে চলেছে। প্রাকৃৃতিক এ সম্পদ আহরণের জন্য শত শত নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ব্যবহার করা হয়। তাই এসব নৌকা-ট্রলার তৈরী ও মেরামতের চিন্তা মাথায় রেখে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আকন ১৯৮৫ সালে রায়েন্দা বাজার পূর্বমাথায় বলেশ্বর নদীর পাড়ে শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল ডকইয়ার্ড নির্মান করেন। ওই একই এলাকায় মৃত আলহাজ্ব আতাহার আলী ফকির ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন ফকির ডকইয়ার্ড নামে আরেকটি ডক। সেই থেকে এ ডক দুটিতে স্থানীয় ছাড়াও উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার নতুন নৌকা-ট্রলার নির্মাণ ও মেরামত কাজ চলে আসছে।
বাদল ডকইয়ার্ডের মালিক আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আকন ও ফকির ডক ইয়ার্ডের পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, বেড়িবাধের কারণে ডক দুটি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে, কাজ হারিয়ে শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এসব শ্রমিক পরিবারের ৫ শতাধিক মানুষ পড়বে চরম দুর্ভোগে। তাছাড়া, ডক দুটি বন্ধ হলে এ এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়বে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা মৎস্য ব্যবসারও ক্ষতি হবে। তারা জানান, বেড়িবাধ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন যাতে ডক দুটি অন্যত্র স্থানান্তর করার সহযোগীতা করে তাহলে শ্রমিকরা বাঁচতে পারবে।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পক্ষে বাদল ডকইয়ার্ডের শ্রমিক নেতা মো. লিখন মোল্লা ও ফকির ডকইয়ার্ডের শ্রমিক নেতা সোহাগ হাওলাদার বলেন, দুটি ডকে একশ’রও বেশি শ্রমিক রয়েছে। ডক বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের বিকল্প কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও ন্যায্য ক্ষতিপূণের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের শরণখোলা উপজেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা মো. আকমল হোসেন আকন বলেন, উপকূলীয় এ শরণখোলাকে রক্ষার জন্য টেকসই বেড়িবাধের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকদের ক্ষতির বিষয়টিও দেখতে হবে। ডক দুটি বন্ধ হলে শুধু শ্রকিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা, এ এলাকার অর্থনীতিতেও মন্দা দেখা দেবে। এলাকার অর্থনীতির চাকা স্বচল রাখতে ডক দুটি অন্যত্র স্থানান্তর করে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিয়েই বাধ কর্তৃপক্ষের কাজ করা উচিৎ।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, ডক শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ দাবি করে আমার দপ্তরে একটা লিখিত আদেবন দিয়েছে। ডক দুটি অন্যত্র স্থানান্ত করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে। তাছাড়া শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য বাধ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/২ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল