বগুড়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুরুতে তেমন শীত অনুভূত না হলেও গত কয়েকদিনের মৃদু শৈত্য প্রবাহে শীত বাড়ছে। দিনের অর্ধেক সময় জুড়ে কোথাও সূর্য্যের দেখা মিলছে না। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো জড়সড় হয়ে পড়েছেন। দিনের বেলাও থাকছে প্রচন্ড শীত। সন্ধ্যার সাথে সাথে শহরের মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বগুড়ার শহরতলীতে দুপুর পর্যন্ত থাকছে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বেলা করে কুয়াশা থাকায় প্রতিদিনই তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে কমছে। নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা শীতজনিত করণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৪০ জন ডায়রিয়ায় এবং ৬ জন শিশু ও বৃদ্ধ শ্বাস-কষ্টজনিত রোগে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে আরো প্রায় অর্ধশত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শীতজনিত করণে রোগে আক্রান্তের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া আছে। ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হযেছে। জেলায় মোট ১২৩ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আজ সোমবার বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব্বোর্চ ছিল ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ছিল ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সব্বোর্চ ছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
জানা যায়, বগুড়ার সকল উপজেলায় শীত জেঁকে বসেছে। শীতের কারণে শহরের ফুটপাত ও হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তবে শীতকে পুঁজি করে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা পোশাকের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুন। দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের শীতার্ত মানুষদেরকে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চারদিকে শীতজনিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা এই শীতজনিত রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এদিকে দিন গড়িয়ে রাতে ক্রমেই বাড়তে থাকে কুয়াশা এবং বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার দাপটে সকালে মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
আজগর আলী, বাদশা মিয়া, আব্দুস সাকুরসহ একাধিক যানবাহন চালক জানান, দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দুপুরেও থাকছে কুয়াশা। অতিমাত্রার সাবধানতাই চলাচল করতে হচ্ছে। ফাঁকা স্থানগুলোয় কুয়াশার দাপটে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়েছে।
রিকসা চালক বকুল মিয়া জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার শীত বেশি। তাই এবারের শীতে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের জানান, শীতের কারণে মানুষের নিউমোনিয়া, সর্দ্দি, জ্বর, কাশি, আমাশয় রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগে ইতিমধ্যে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন। সাধ্যানুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার