ময়মনসিংহের ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ চলাচলের জন্য হালুয়াঘাটের আমতৈল ইউনিয়নের চকেরকান্দা নামক স্থানে কংশ নদীর উপর একটি ব্রিজের দাবি বহু বছরের। একটি ব্রিজের অভাবে ওইসব এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে না। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না কৃষকরা। এমনকি রোগী টানাটানিসহ হাজারো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উভয় পাশের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের। ৮/১০ বছর আগে এলাকার লোকজন মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে একটা বাঁশ-কাঠের সেতু নির্মাণ করেছিল। সেটাও ভেঙে গেছে।
গত ৫ বছর ধরে পায়ে চলাচল ব্যতিত ওই সেতু দিয়ে কোন মালামাল বহন করা সম্ভব হয় না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ফুলপুর-হালুয়াঘাট সেতুর দু’পাশের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ। দেশ স্বাধীনের প্রায় ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও চকেরকান্দায় কংশ নদীর উপর আজও হয়নি কোন একটি সেতু। নৌকা দিয়ে ভয়াবহ কংশ পারাপার করতো তারা। অবশেষে বহু দুর্ঘটনার শিকার ভুক্তভোগী এলাকাবাসি দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে লোকজনের নিকট থেকে চাঁদা উঠিয়ে বাঁশ-কাঠ কিনে নির্মাণ করেছিল চকেরকান্দা সেতু। প্রায় ৫/৬ বছর যাবৎ সেটিও স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে কয়েক হাত পর পর বাঁশ বেঁধে মালামাল পারাপারে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় সেতুটি।
বাঁশ-কাঠের ওই সেতু দিয়ে চকেরকান্দা, বিষমপুর, বাহিরশিমুল, আমতৈল, সোয়ারিকান্দা, বাদে বাহিরশিমুল, খন্ডল, চুয়ান্ন হাজার, কোণাপাড়া, যোগানিয়া, চাতুলিয়াকান্দা, কুঠুরাকান্দা, মালিঝিকান্দা, নিশুনিয়াকান্দা, পুটিয়া, পুরাপুটিয়া ও ঘোনাপাড়াসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে থাকেন।
সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও ব্র্যাক কর্মীসহ কথা হয় পথচারীদের সাথে। চকেরকান্দা গ্রামের আব্দুল মোতালেব ফকির বলেন, এর কারণে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত।
একই গ্রামের ফজলুল হক শাকিল বলেন, কোন জিনিস বাজারে নিতে চাইলে মহাবিপদ। এইনো আইন্যা মাতাত কইরা অল্ফ অল্ফ ফার হরন লাগে। এরফর আবার ঠেলা গাড়িত কইরা বাইশ্যামুল বাজারে নেওন লাগে।
ডা. আব্দুল মজিদ বলেন, বর্ষাকাল আইলে আমরার বিপদের সীমা থাহে না। সময়মত নৌকা পাওয়া যায় না। ছাত্রছাত্রীরা ইস্কুলে যাইতারে না। রোগীটুগি লইয়া বিফদ। এলাইগ্যাই সাইদুল মেম্বাররা ও আমরা সবাই মিইল্যা ধারকর্জা কইরা সেতুডা বানাইছলাম। অহন এই কয় বছর দইরা এই যে ভাইঙা ফরছে, আর কেউ ঠিক করে না।
বাহিরশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম, আরাফাত রহমান ও আতাহারুল ইসলাম জানায়, এই ভাঙা সেতুর ফাঁক দিয়ে পা পিছলে তাদের অনেকেই ব্যথা পেয়েছে।
সাবেক ইউপি মেম্বার মোজাম্মেল হক বলেন, একটা ব্রিজের লাইগ্যা আমরা বহুদিন দইরা দৌড়ঝাঁপ পারতাছি।
কংশপাড়ের গৃহবধু খোদেজা খাতুন জানান, কয়বারই তো ইঞ্জিনিয়াররা আয়া মাফ নিয়া গেলো। কই, কিছুই তো অইলো না।
খোদেজার কথার সাঁয় দিয়ে ৩নং চকেরকান্দা ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সাইদুল ইসলাম বলেন, একটা ব্রিজের আশায় আশায় আমরার জীবনই শেষ অইয়া যাইতাছে। গত তিন বছর আগে ইঞ্জিনিয়ার আয়া মাপ নিয়া গেছে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত এর কোন ফলাফল ফাইলাম না।
স্থানীয় আব্দুল মালেক বলেন, এইডা আমরার কপাল। কিচ্ছু করার নাই। এলাকাত্তাইক্যা টুহায়া টাহায়া ব্রিজডা ঠিক করছিলাম। অহন আইজ কয় বছর দইরা এইডাও ভাইঙা পইরা রইছে।
মেরামত করার উদ্যোগ নেন না কেন জানতে চাইলে হাসিনা বেগম বলেন, এইডার আগের দেনাই শোধ অইছে না! অহন নতুন কইরা উদ্যোগ নিবো কেমনে? এ সময় এলাকাবাসি সরকারের কাছে চকেরকান্দায় কংশ নদীর উপর একটি ব্রিজ দাবি করেন।
এ ব্যাপারে হালুয়াঘাট উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জায়গায় একটি ব্রিজের প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে এ পর্যন্ত আমরা এর জন্য কোন প্রজেক্ট পাইনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা