ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত আমির হোসেন রাব্বির মরদেহ শুক্রবার সকালে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। মরদেহবাহী এ্যাম্বুলেন্স ওই গ্রামে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনদের কান্না আর আহাজারীতে ভারি হয়েছে পাবনার সাথিয়া উপজেলার চরপাড়া গ্রামের বাতাস। এ বছর বাবাকে হজ্বে পাঠানোর কথা ছিল রাব্বির।
রাব্বির স্বজন ও এলাকাবাসীরা জানান, আগামী শব-ই-বরাতের ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল তার। বাড়িতে পাকা ঘর করার জন্য বালি ও ইটের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। রাব্বির আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ায় সব স্বপ্নই শেষ হয়ে গেল বলে দাবি করেন স্বজনরা।
২০১৪ সালে পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাষ্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য বসে না থেকে সে ঢাকার ইকু লাইন বায়িং হাউজে কর্মজীবন শুরু করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই হতবাক হয়ে পরেছেন।
নিহত রাব্বির বাবা আইয়ুব আলী জানান, ঢাকার বহুতল ভবনগুলিতে পর্যাপ্ত জরুরি বহিনির্গমন ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় অকালে জীবন দিতে হলো তার একমাত্র ছেলেকে। এভাবে আর কতো মানুষ সন্তান হারা হবে। দেশে এতো উন্নয়ন হচ্ছে অথচ সরকার এসবের উপর নজর দেয় না কেন। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তার সন্তান মারা যাওয়ার জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন তিনি।
একই সাথে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন আমাকে আমার ছেলের দাফন কাফনের জন্যে অনুদান দিয়েছেন। তাদের এই অনুদান ফিরিয়ে দিয়ে আমি অপমান করিনি। তবে এই সামান্য অর্থ দিয়ে কি হবে প্রশ্ন তার। তার ছেলে প্রতি মাসে পঞ্চান্ন হাজার টাকা বেতন পেত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে নিহতের ছোট বোন ফারজানা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ বছর আমার বাবাকে হজ্বে পাঠানোর কথা ছিল। আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। বাড়ির উঠানে ইটের স্তুপ করে রেখেছেন, শবে বরাতের ছুটিতে এসে বাড়ির কাজ শুরু করবেন, তারপর আমরা তাকে বিয়ে দিব, সব স্বপ্নই ফিকে হয়ে গেল।
নিহতের মা রত্না খাতুন একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছেন, বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। গণমাধ্যম কর্মীরা তার সথে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
আর-আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম বলেন, রাব্বির পরিবারের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। ছেলেটি বাড়ি এলে আমাদের সাথে দেখা করে বিভিন্ন কুশলাদি বিনিময় করতেন। রাব্বি এভাবে অকালে চলে যাবে, সেটা আমরা কখনো ভাবিনি।
এদিকে এই ঘটনার পর সাথিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ওই বাড়িতে গিয়ে দাফন কাফনের জন্যে নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়ে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্বজনদের। বাদ জুমা ওই গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয় আমির হোসেন রাব্বি। তিনি পাবনার সাথিয়া উপজেলার আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি ওই ভবনের ১১ তলার ইকু লাইন বায়িং হাউসে কর্মরত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল