পাহাড়ে জুড়ে এখন আমের সোনালি মুকুলের ভরপুর। ছড়িয়ে পড়ছে আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে ভাসছে মৌ মৌ গন্ধ। এ ঘ্রাণ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করেছে অনেক আগেই। আর এখন আমের ফলনের অপেক্ষা। রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ের আম বাগানগুলোর গাছে গাছে ভরে গেছে এসব মুকুলে। পাশাপাশি পাহাড়ে মধু মাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে এ মুকুল। প্রায় গাছে আমের ফুলগুলো পরিণত হয়েছে গুটি ফলে। তাই দেখে আনন্দে নেচে উঠছে কৃষকের মন।
রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ে আমের বাম্পার মুকুল এসেছে। বরকল, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বালুখালী, বন্দুভাঙ্গা, সুবলং, কুতুকছড়ি, মৈত্রী নগর, সাপছড়ি, মগবান, জীবতলীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে এবার আমের মুকুল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের আমের উৎপাদন প্রচুর ফলন হওয়ায়, আম চাষের দিকে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
আম চাষিরা বলছে, প্রতিবছর রাঙামাটির পাহাড়ে উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত হয় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষকরা পাহাড়ে বিস্তর আমরূপালির ফলনও পেয়েছেন।
বালুখালী ইউনিয়নের কান্দেবছড়া গ্রামের বাসিন্দা কনা চাকমা জানান, বিগত বছরগুলোতে তার বাগানে ২ লাখ টাকার মত আমরূপালি বিক্রি করেছেন। তিনি পাঁচ বছর আগে মাত্র ১০০টি আমরূপালি চারা লাগিয়ে বাগান করেছেন। এবছরও লাখপতি হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
অন্যদিকে, পাহাড়ে লাভজনকভাবে আমের আবাদ হওয়ায় উদ্যোগী হচ্ছে কৃষকরা। তাই অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন গড়ে তুলেছে শত শত আম বাগান। রাঙামাটি জেলা প্রতি বছর কি পরিমাণ আমের আবাদ হয় তার কোন সঠিক কোন পরিসংখ্যান জানা নাথাকলেও কৃষি বিভাগের বলছে, রাঙামাটিতে এবছর আমের চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর অধিক জমিতে।
এব্যাপারে রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপ্রু মারমা জানান, রাঙামাটি পাহাড়ের আম বাগানগুলোতে বেশ মুকুল দেখা যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। তাই এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময় মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা আমের আশা অনুরূপ ফলন পাবে।
এদিকে প্রতি বছরের মত এবছরও কৃষকদের অভিযোগ, রাঙামাটি জেলায় প্রতি বছর উৎপাদিত প্রচুর ফলমূল সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে কোল্ডষ্টোরেজ ও আড়ত না থাকায় কৃষকদের বাধ্য হয়ে কষ্টে উৎপাদিত পণ্য পানির দরে বিক্রি করতে হয়। তাই মৌসুমী ফল উৎপাদনের আগেই পার্বত্যাঞ্চলে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানায় কৃষকরা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর