রাজধানীর ডেমরায় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে ফের উৎপাদন বন্ধ রেখে সড়ক অবরোধ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী ও করিম জুট মিলের শ্রমিকরা।
সোমবার সকাল থেকে তারা ডেমরা-যাত্রাবাড়ী, ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এ সময় শ্রমিকেরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি রাস্তায় টায়ার, কাঠ-বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি, রিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করেন।
এ সময় শ্রমিকরা চালক ও যাত্রীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে গালমন্দ করেন। এদিকে সড়ক অবরোধের ঘটনায় পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় ডেমরা ও আশাপাশের এলাকার কর্মজীবি ও অফিসগামী লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এ্যাম্বুলেন্স ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গাড়ি ছেড়ে দেন।
ঘটনাস্থলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ৮ সপ্তাহের বকেয়া বেতন ও মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবিতে ইতিপূর্বেও আমরা দফায় দফায় কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বারবার আশ্বাস দিলেও সরকার শ্রমিকের বিষয়টি আমলে নেয়নি। আর বিজেএমসি শ্রমিকের ভাগ্য ও দাবি আদায় নিয়ে বরাবরই ছিনিমিনি খেলছে। গত ১৫ এপ্রিল একই দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ, সিবিএ নন সিবিএ পরিষদের পক্ষ থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ওই ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকেরা। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে দাবি পরিশোধের চিঠি পেয়ে ১৭ এপ্রিল শ্রমিকেরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে ফিরে যায়।
শ্রমিকরা আরো জানায়, তাদের ১০ সপ্তাহের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি গত ২৫ এপ্রিলের মধ্যে আদায় করার কথা ছিল। আর মজুরি কমিশনের বিষয়টি আগামী ১৮ মে’র মধ্যে সম্পাদন করার কথা। আশ্বাস অনুযায়ী আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি বলে আমরা রাস্তায় নেমেছি। ১৮ ই মে’র মধ্যে যদি কর্তৃপক্ষ মজুরি কমিশনের বিষয়টি সমাধান না করে তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকেরা।
এদিকে অবরোধের ঘটনায় ভুক্তভোগী পথচারীরা জানায়, আজ আন্তর্জাতিক নিরাপদ সড়ক দিবস হলেও ডেমরার সড়কে আমরা চলতে পারছি না। পাটকল শ্রমিকদের দাবিগুলো আদায় না হওয়ায় তারা বারবার রাস্তায় নামছেন। তাদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সমাধান করা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেমরার করিম জুট মিলের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, গত ১৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের টাকা আমরা এখনো পাইনি। যখন টাকা চলে আসবে তখনই আমরা শ্রমিকদের তা পরিশোধ করব। তবে এসব বিষয়ে সিবিএর সঙ্গে বরাবরই কথা হচ্ছে। তারপরও শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছে। এদিকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে বিজেএমসি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে বরাবরই যোগাযোগ রাখছেন। বাজেটকৃত অর্থ ছাড়ের বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে কিছুটা সময় লাগে। শ্রমিকদের সব দাবিগুলো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়নের পথে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পাটকল শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়মিত সাপ্তাহিক মজুরি ও বেতন প্রদান, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ-গ্র্যাটুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন