আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রংপুর জেলা সদরসহ আট উপজেলার হাজার-হাজার মানুষ। বেড়েছে ভাইরাস জনিত জ্বর-ডাইরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ভাইরাসজনিত জ্বরসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। আক্রান্ত মানুষের উপচে পড়া ভীড়।
কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগে বেশ কিছু শিশু রোগী দেখা গেলেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছে না ডাক্তারের অভাবে। অনেকে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এসব পল্লী চিকিৎসক উচ্চ খমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের মাধ্যমে চিকিৎসা করছেন।
গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় গরমে অনেকেই জ্বর, ডায়রিয়া, ফোসকাপড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে পড়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ভাইরাস জ্বর ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে ওষুধ সেবন করেও তিন দিনের আগে আরোগ্য লাভ হচ্ছে না। আক্রান্তদের নূন্যতম ৩ থেকে ৭ দিন ভুগতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবারে সব সদস্য এক সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় সেবা করার লোকও পাচ্ছেন না তারা।
পীরগাছা, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগগঞ্জ, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ দিনে ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ প্রতিটি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৈনিক গড়ে প্রায় ৭ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভর্তি হচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী । প্রতিদিন বহিঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগে শতাধিক শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, শিশুকে নিয়ে বহিঃবিভাগে ডাক্তারের সেবা নিতে এসে দেখি ডাক্তারের কক্ষে তালা লাগানো বা ডাক্তার নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগে বেশ কিছু শিশু রোগী দেখা গেলেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না ডাক্তারের অভাবে। যে সকল রোগী ৭-১০ দিনের আক্রান্ত তারা ছুটছেন জেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে।
তবে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের মতে এটি আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত ভাইরাস জ্বর। আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্তদের আলাদা বিছানায় রেখে সেবা করতে হবে।
এ ভাইরাসটি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং হঠাৎ তা নেমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। হাঁচি, কাশি বা লালার মাধ্যমে অন্যদেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ চিকিৎসকদের।
ওষুধ সেবন না করলেও ৩/৪ দিন পর শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বাভাবিক হবে। আক্রান্তের ৩/৪ দিন আগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করাই উত্তম বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. আসিফ ফেরদৌস বলেন, আগে আমরা তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ রোগীকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দিতাম। এখন চার থেখে পাঁচ গুণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৪০ জন ভাইরাসজনিত জ্বরসহ নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এখানে পদ থাকলেও কোনও শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। আইএমসি কর্নারে প্রতিদিন এক থেকে দেড় শতাধিক শিশু রোগীর চিকিৎসা দিচেছন সিনিয়র স্টাফ নার্স হেমন্ত কুমার।
কাউনিয়া উপজেলার টাবুর চর এলাকার জাহিদুল ইসলাম জানান, টানা তিন দিন ধরে তিনিসহ তার পরিবারে তিনজন জ্বরে ভুগছেন। মাথাসহ পুরো শরীর ব্যথা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সঙ্গে থাকে সর্দি ও কাশি।
শুধু তার পরিবারই নয়। তাদের পাড়ার অনেক বাসায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পারিবারিকভাবে সচেতন হলে এ রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা আবু জাকিরুল ইসলাম জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জেলায় ভাইরাসজনিত জ্বর ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। রোগীকে সেবা দানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অন্যথায় ছড়িয়ে পড়বে
তিনি বলেন, রোগীকে লেবুর সরবতও নিয়মিত খাবার খেতে হবে। আক্রান্তের ৩/৪ দিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
তবে আক্রান্তের ৫ দিন অতিবাহিত হলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/কালাম