রংপুরে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাড়িভাঙা আমের দাম কেজিতে ১২৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়, যা প্রতি কেজিতে ১৭৫ টাকার সমান। অথচ ভরা মৌসুমে এই আমের দাম ছিল কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
স্থানীয় বাজারের তথ্য বলছে, দুই সপ্তাহ আগেও হাড়িভাঙা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। তবে এখন এই সুমিষ্ট আম মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
মিঠাপুকুরের আমচাষী শাহিনুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি ছিল। তবে হাড়িভাঙা পাকা আম দু’দিনের বেশি রাখা যায় না। এখন বাগানগুলোতে আম শেষ পর্যায়ে, তাই দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।’
তিনি আরও জানান, ‘এ সময়ে আমের সাইজ বড় হয়, ফলে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩টির বেশি থাকে না। বর্তমানে বাজারে হাড়িভাঙা বিক্রি হচ্ছে ৬,৫০০ থেকে ৭,০০০ টাকা প্রতি মণ।’
চাষীরা জানান, অধিকাংশ বাগানে এখন হাড়িভাঙা আম নেই। হাতে গোনা কিছু বাগানে অল্প পরিমাণে থাকলেও তা চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।
তারা দাবি করেন, হাড়িভাঙা আমে কোনো ফরমালিন বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। পাশাপাশি এটি অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু, যা চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ।
হাড়িভাঙা আমের মিষ্টতার কারণে ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা—এসব আমের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।
রংপুরের পদাগঞ্জ, বদরগঞ্জের স্টেশন বাজার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হাট এবং সিটি বাজার হাড়িভাঙা আমের প্রধান পাইকারি হাট। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাড়িভাঙা সরবরাহ করছেন ব্যবসায়ীরা।
টার্মিনালের পশ্চিম কোনে বসেছে ‘হাড়িভাঙার মিনি হাট’, যা শহরের পাইকারদের একটি নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
পদাগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা যায় হাড়িভাঙার ঘনবাগান। কুতুবপুর, খোড়াগাছ, কদমতলী, পীরের হাট, তালপুকুর, মাঠের হাট ও আখড়ের হাটসহ আশপাশের পুরো অঞ্চলেই এই আমের চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি হাড়িভাঙা চাষের উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ধান বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ