প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতিমালার ফলে চলতি বছরে পাঁচ লক্ষাধিক অভিবাসী স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট (AEI)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে মার্কিন অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে, বিশেষ করে শ্রমবাজারে।
এইআই-এর গবেষণায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করা অভিবাসীদের অধিকাংশই অবৈধ ছিলেন না। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ধর-পাকড়, গ্রেফতার ও বহিষ্কারের আতঙ্কে দেশ ছাড়ছেন। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এবারের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও এটি ট্রাম্পের আগ্রাসী অভিবাসন নীতির ধারাবাহিক ফল।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংস্থা ম্যাক্রোট্রেন্ডস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন ১৩ লাখ অভিবাসী। করোনাকালে (২০২০ সালে) সংখ্যাটি ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার। গবেষণাগুলোতে উঠে এসেছে, শুধু অভিবাসীদের দেশত্যাগই নয়, নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ চেষ্টাও কমেছে। এমনকি, কনস্যুলেট পর্যায়েও অভিবাসন ভিসা প্রদান প্রক্রিয়ায় ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মার্কিন শ্রম দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কল-কারখানা, কৃষি খামার, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরতদের ১৯.২ শতাংশই অভিবাসী। তাদের উপার্জনের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয়ে ব্যবহার হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে চালনা করে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল জানায়, অভিবাসীরা বছরে প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। এর মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যয় ২৯৯ বিলিয়ন ডলার, আর বাসা ভাড়ায় যায় প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অভিবাসীদের দেশত্যাগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) কমেছে ০.৭৫ শতাংশ। ব্যাংকটির গবেষক ম্যাডেলিন জ্যাভডনি বলেন, “শ্রমশক্তিতে অভিবাসীদের অংশ কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কম জন্মহার ও বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের অবদান অস্বীকার করা অবিচার।”
হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র আবিগাইল জ্যাকসন বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেবলমাত্র গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদেরই বহিষ্কারে মনোনিবেশ করেছেন। এর ফলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। নাগরিকদের ট্যাক্স অপব্যয় হচ্ছে না এবং আমেরিকানরাই সবকিছুর সুফল পাচ্ছেন।”
তবে এই যুক্তির বিপরীতে অনেক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস-এর অধ্যাপক জিয়োভ্যানি পেরির মতে, নির্মাণ, কৃষি, রেস্টুরেন্ট এবং খুচরা বাণিজ্যে অভিবাসন নির্ভরতা এতটাই বেশি যে অভিবাসীরা না থাকলে এই খাতগুলো মারাত্মক শ্রমঘাটতির সম্মুখীন হয়।
AEI-এর ইকোনোমিক পলিসি স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র ফেলো স্ট্যান ভিউগার বলেন, “কৃষি, নির্মাণ ও লেইজার খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গৃহনির্মাণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং রেস্টুরেন্টগুলোতে এর প্রভাব দৃশ্যমান।”
অভিবাসীদের এই ধারা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য তা দীর্ঘমেয়াদে সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, অভিবাসন নীতি পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া শ্রম বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল