চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ফাতেমা বেগম রূপালীকে (৩৬) গলা ও মাথায় কোপ মেরে হত্যা করেন স্বামী জামাল গাজী (৩৮)। প্রেম, বিয়ে এবং সংসার শুরুর পর সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘ অভিযানে জামালকে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বৃত্তিপাড়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
রূপালী মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ ঘোড়াধারী গ্রামের কালু পাটওয়ারীর মেয়ে। জামাল গাজী পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার পানপট্টি গেড়ামধন গ্রামের মোস্তফা গাজীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, ১১ মাস আগে টিকটকে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সময় রূপালী নিজেকে কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) সহকারী হিসেবে পরিচয় দিলেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং কক্সবাজার ও সিলেটে একাধিকবার ভ্রমণ করেন তারা।
২০২৪ সালের আগস্টে তারা ৩ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন। জামালের এটি ছিল তৃতীয় বিয়ে, আর রূপালীর পঞ্চম। বিয়ের পর জামাল শ্বশুরবাড়িতে এক মাস থাকেন। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় দাম্পত্য কলহ।
রূপালী জামালকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে সন্দেহ করতেন। এমনকি জামাল তার আগের স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠাতেন, যা নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
১৮ জুন জামাল রূপালীর ঘর থেকে ১১ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে রূপালী তাকে ধরে এনে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করলেও নগদ টাকা ফেরত পাননি। রূপালী মামলা করার হুমকি দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
১১ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে জামাল ঘুমন্ত রূপালীর মাথা ও গলায় ধারালো দা দিয়ে আঘাত করে। পরে মৃতদেহ টয়লেটের ট্যাংকির কাছে নিয়ে গিয়ে মুখ, ঘাড় ও গলায় আরও কোপ দিয়ে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং ট্যাংকির ভেতর ফেলে দেয়।
ঘটনার দিনই রূপালীর ছেলে টিপু পাটওয়ারী জামালকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার জানান, জামালকে ধরতে বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সোমবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক