বন্যার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভয়ঙ্কর রূপ দেখা দিয়েছে। প্রবল চাপের কারণে নদী তীর এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়ায় ইতোমধ্যে দেড় থেকে দুই হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি ও ছয়টি বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে।
স্রোত ও পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার ঘর ও ১৬৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৩শ’ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৫টি ব্রীজের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। আট হাজার হেক্টর জমির ধান-পাট ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। প্রবল স্রোতের কারণে রাতে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শহরবাসীর মধ্যে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত গতিতে রাত থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত সিসি ব্লক ফেলে রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে জেলার প্রায় ২শ’টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ ৪-৫ দিন যাবত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের অবস্থা আরও করুণ।
চরাঞ্চলে এক টুকরো জায়গাও নেই যেখানে আশ্রয় নিয়ে মানুষজন রান্না করে খাবে। ঘরে চাল থাকলেও চুলো ও লাখড়ি ভিজে যাওয়ায় রান্না করে খেতে পারছে না। ঘরে শুকনো খাবার না থাকায় ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে বন্যা কবলিতরা চরম কষ্টে দিন যাপন করছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দিনরাত পানির মধ্যে থাকায় পানিবাহিত রোগ ঘা-পাচড়া দেখা দিতে শুরু করেছে।
দিনমজুর এসব মানুষের রোজগার বন্ধ থাকায় ওষুধ কেনার মতো সার্মথ্যও তাদের কাছে নেই। সরকার থেকে পরিবার প্রতি মাত্র ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও এখনো অনেকের হাতে তা পৌঁছেনি। এনিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিতদের মধ্যে।
চরাঞ্চলের কাওয়াকেলা ইউনিয়নের হাসিনা ও রহিমা খাতুন জানান, সরকার থেকে শুধু ১০ কেজি করে মোটা চাল দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে চাল দিয়ে কি করব? চুলাও নেই-লাখড়ি নেই। রান্না করতে পারছি না। কোন রকমে এক বেলা পাক করে খেয়ে সারাদিন পাড় করতে হচ্ছে। ঘরে কোন শুকনো খাবার নেই। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের আরও বেশি কষ্টে হচ্ছে।
তারা বলেন, সাতদিন যাবত পানির মধ্যে চলাফেরা করতে হচ্ছে। হাত-পায়ে ঘা হয়ে গেছে। রাতে হাত-পায়ের করালিতে জ্বালাপোড়া করে। ঘায়ের জ্বালায় ছোট বড় কেউ ঘুমাতে পারে না। কামাই কাজি না থাকায় ওষুধ কিনতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদেরকেও জন্য শুকনো খাবার কিনে দিতে পারছি না। এ অবস্থায় সরকার থেকে যদি শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, শিশুদের জন্য বিস্কটু-দুধের ব্যবস্থা করে দিতো খুব উপকার হতো।
শহরের গুনেরগাঁতী গ্রামে বাঁধে আশ্রয় নেয়া আরজিনা, মরিয়াও আনছিা খাতুন জানান, বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ঘর তোলার কিছুই নেই। রাতে বাঁধের উপর খোলা আকাশেরনিনীচে গাঁদাগাদি করে থাকতে হয়। কয়েকজন পলিথিন ও দু-একটি ভাঙা টিন দিয়ে ঝুপড় তুলে শিশুসহ গরু ছাগাল নিয়ে এক ঘরে রাত যাপন করছি। তাদের অভিযোগ এতো কষ্টে থাকলেও মেম্বার-চেয়ারম্যান খোঁজ নিতেও আসেনি।
জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, সরকার বন্যা কবলিতদের পাশে সবসময় রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত সব উপজেলায় ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ ও বিতরণ শুরু হয়েছে। হয়তো কোনো কোনো এলাকায় বিতরণ করতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সব বন্যা কবলিতরা ত্রাণ সামগ্রী পাবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন