শিরোনাম
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৮:১৪

৪০ বছর ধরে নারীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড. হোসনে-আরা

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

৪০ বছর ধরে নারীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড. হোসনে-আরা

ড. হোসনে-আরা বেগম

টিএমএসএস এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম। সংগ্রামী এই নারী গত প্রায় ৪০ বছরে ৪০ লাখ নারীকে স্বপ্ন দেখিয়ে আলোর পথে ধাবিত করেছেন। দেশের ৬৩ জেলায় কোনো না কোনো নারীর উন্নয়নে জড়িয়েছেন তিনি। সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে নারীদের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সচেতন, সামাজিক ব্যাধি থেকে সুরক্ষায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এই সব প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি তিনি হাজার হাজার নারীকে চাকরিও দিয়েছেন। যাদের কিছুই ছিল না, তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সমাজিকভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে।

দীর্ঘ চার দশক ধরে শ্রম দিয়ে তিনি গড়ে তুলছেন দেশের নামী বে-সরকারি মহিলা উন্নয়ন সংগঠন টিএমএসএস। এ সংগঠন দেশের দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্রায়নে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। দেশের দরিদ্র নারী জনগোষ্ঠির উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম (অশোকা ফেলো এ্যান্ড পিএইচএফ)। ‌‘পরিবারই হোক নারী উন্নয়নের কেন্দ্রস্থ’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি কাজ শুরু করেন।

জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলার ঠেঙ্গামারা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত ‘ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ’ সংক্ষেপে টিএমএসএস। বগুড়া রংপুর মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় ৫০০ বিঘা জায়গা জুড়ে টিএমএসএস’র প্রতিষ্ঠা। 

আজকে বিশাল আর বিরাট ভবন দেখা গেলেও একদিন এমন ভবন গড়ার স্বপ্ন নিয়েই স্থানীয় ফোরকানিয়া মাদ্রাসার টিনের চালায় একটি ক্ষুদ্র কক্ষকে অফিস হিসেবে চিহ্নিত করে টিএমএসএস এর কার্যক্রম শুরু হয়। ভিখারিনী ফাতেমা বেওয়ার ভিক্ষার মুষ্টির চাল জমা করার মাধ্যমে টিএমএসএস তার কার্যক্রম শুরু করেন। নারী ভিক্ষুকদের ভিক্ষার চাল জমিয়ে কিছু করার স্বপ্ন তাগিদ দেয়। এরপর সমিতির সংখ্যা বাড়াতে খিচুরি রান্না করে ভিক্ষুক সম্মেলন করেন। 

এই সম্মেলন থেকে ৩৭৬ জন নারী ভিক্ষুক সংগ্রহ হয়। যারা সকলেই নিজেদের উন্নয়ন চাইলেন। তাদের নিয়েই ১৯৮০ সালে শুরু হলো নারী সংগঠন টিএমএসএস। এরপর সবই রূপকথার মত। যা এখন চোখে দেখা যায়। বর্তমানে টিএমএসএস এ ৮৮টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। গড়েছেন অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। 

মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাভেল্স এ্যান্ড টুরিজম, পুন্ড্র ইউনির্ভাসিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গরীব রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবা হাসপাতাল, সিএনজি স্টেশন, পাঁচ তারকা হোটেল মমইন, রয়েছে নিজস্ব হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন কিছু। 

অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালে বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারা গ্রামে। তার পিতা সোলাইমান আলী পাইকাড়। মাতার নাম জোবাইদা বেগম। পিতা মাতা হোসনে-আরা বেগম-এর জন্মের সময় তার নাম রেখেছিলেন আব্দুস সামাদ। তিনি পুত্র সন্তান হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় ২৩ বছর বয়সে অলৌকিকভাবে শারীরিক পরিবর্তন ঘটলে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে আব্দুস সামাদ থেকে নারী হোসনে-আরা বেগম হয়ে এক নতুন জীবন ধারণ শুরু করেন। 

তিনি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী বন্ধু আনসার আলী তালুকদারকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রফেসর আলহাজ্ব আনসার আলী তালুকদার ও অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগমের সংসারে একমাত্র পূত্র সন্তান এম আলী হায়দার রয়েছেন। ড. হোসনে-আরা বেগম প্রথমে কলেজ শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন। 

বর্তমানে টিএমএসএস এর ৩৫ হাজার নারী কর্মরত রয়েছে। আর দেশের ৬৩ জেলায় এই সংগঠনটি ৩৭ লাখ মহিলাকে সংগঠিত করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।

অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম জানান, শেষ সময়ে এসে ইচ্ছে রয়েছে, কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলে বগুড়ায় প্রবীণদের জন্য শান্তির মৃত্যুঘর বা পেলিয়াটিক সেন্টার গড়তে চাই। তাদের মৃত্যু যেন শান্তির হয়। মৃত্যু কষ্ট যেন না ভোগায়। এছাড়া ক্যান্সার নিরাময় হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার, ইকোনমিক জোন, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিকরণ এবং নারীদের জন্য আরও এমন কিছু প্রশিক্ষণ দেয়ার ইচ্ছে, যেখানে এক একটি নারী এমনভাবে তৈরি হবে যেন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে এসে চাকরি ও সম্মান দেবে। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর