বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। তড়িঘড়ি করে পুলিশকে খুঁজছেন এক নারী। পুলিশেকে পেয়ে তিনি জানালেন, তার ব্যাগে রাখা ৩ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটি একটু আগে চুরি হয়ে গেছে। হাতের ব্যথা নিয়ে দুপুর ১২টায় বহির্বিভাগের অর্থপেডিকস ডাক্তার দেখানোর টিকিট কাটার লাইনে টিকিট কেটে ৩৪ নম্বর রুমের কাছে যেতেই ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খোলা দেখতে পান তিনি। টিকিট কাটার কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে ব্যাগ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোনটি বের করে নিয়েছে চোর।
পুলিশকে তিনি জানান, এক নারী তাকে অনুসরণ করছিলেন। তবে পুলিশ খুঁজেও সন্দেহভাজন ওই নারীকে পাননি। রাবেয়া খাতুন নামের ওই নারী জানান, তার ব্যাগের ভিতরে ৩ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিলো। এখন শুধু খুচরা টাকাগুলো ব্যাগে পড়ে আছে। বাড়ি যাওয়ার ভাড়া পর্যন্ত নেই। তাই হাসপাতালের পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কাছে টাকা ধার নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।
পুলিশ জানান, সিসিটিভি না থাকায় চোরকে চিহ্নিত করা কঠিন। ভিড়ের মধ্যে কে চুরি করেছে তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায় না। মাঝে মাঝে দুই-একজনকে ধরে থানায় নেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে হাসপাতালের আশেপাশে দেখলে তাদের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
তবে সিসিটিভি না থাকায় রামেক হাসপাতালে এমন ঘটনা এখন নিত্যদিনের। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে অনেক রোগী ও তার স্বজনের মোবাইল ও টাকা চুরি গেছে। পুঠিয়া থেকে বোনের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন হেলেনা বেগম। তার সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
চিকিৎসা নিতে আসা মেহেদী হাসান জানান, তার বন্ধুর বোনের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সবার সামনেই ভ্যনিটি ব্যাগের ভিতর থেকেই চুরি যাচ্ছে টাকা ও মোবাইল ফোন।
হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকরা জানান, একটা সিন্ডিকেট এই চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তা না হলে এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটতো না। বর্তমানে এই সমস্যা অনেকটা বেড়েছে। চিকিৎসকদের কাছে দেখানোর সময় রোগী ও তার স্বজনরাও অভিযোগ করেন। তবে অনেক দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা আসায় থানায় অভিযোগ করতেও ভয় পান তারা। অনেকে বাড়তি ঝামেলায় পোহাতে চান না বলে অভিযোগও করতে চান না।
নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রহুল কুদ্দুস জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলবো। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলো নিয়ে পদক্ষপে নিলে ভালো হয়।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। চোরকে আটক করে থানায় দিলে চোররা কয়েকদিনের মাথায় জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। এই জন্য অনেক দালালের ছবি আমরা বহির্বিভাগে ঝুলিয়ে রেখেছি যেন সবাই সচেতন হয়। এ বিষয়ে সব আনসার সদস্যদের বলবো আর বহির্বিভাগে যেন পর্যাপ্ত সিটিটিভি বসানো হয় সে বিষয়ে পরিচালককে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা