বগুড়ার ধুনটে সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
জানা গেছে, ধুনট সদরপাড়া গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের ছেলে সুলতান মাহমুদ ২০১৫ সালে ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ নিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে পুলিশ কনস্টেবল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার জাল ফেলে প্রায় বগুড়া, কাজিপুর, ধুনটসহ বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ নির্ধারিত টাকার পরিমান লিখে তার সঞ্চয়ী হিসাব নং-১৩৬ ধুনট রূপালী ব্যাংক শাখার চেক দিয়েছেন চাকরি প্রার্থীদের। তবে কোন কারনে চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে এক মাসের মধ্যে এককালীন টাকা রূপালী ব্যাংক থেকে তুলে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সুলতান মাহমুদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কোন টাকা না থাকায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এসব ভুক্তভোগিরা।
প্রতারণার শিকার বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কোয়েল ইসলাম জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নাতনী জামাই পরিচয় দিয়ে সুলতান মাহমুদ আমার মেয়ের জামাইকে এ্যসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত তিন বছর আগে আমার থেকে নগদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়। প্রমাণ হিসেবে তার ধুনট রূপালী ব্যাংক শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-১৩৬ একটি চেক দেয়। কিন্তু চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইলে সে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন তালবাহানা করছে। এদিকে তার ফোন বন্ধ থাকায় পাওনা টাকার জন্য তার নিজ বাড়ী ও শ্বশুর বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি।
একইভাবে ধুনট উপজেলার পারনাটাবাড়ি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল মোমিন মুকুলের ছেলে নাসিম উদ্দিনকে রূপালী ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ও ২০১৯ সালের ২৫ মে দুই দফা নগদ ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকায় সুলতান মাহমুদ। জমি বিক্রি করে সুলতানকে টাকা দিয়েছিলেন নাসিম উদ্দিন। প্রমাণ হিসেবে তাকেও ধুনট রূপালী ব্যাংক শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-১৩৬ একটি চেক দেওয়া হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও চাকরি না পেয়ে ভুক্তভোগি নাসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বগুড়ার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বিচারক অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে ধুনট থানার ওসিকে নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ২৮ জুন ধুনট থানায় মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়। মামলা নং-২০। মামলাটি বগুড়া জেলা সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছেন।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে আত্বীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। বিষয়টি আমার পরিবারিক। তাই এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি নন।
রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখা ব্যবস্থাপক শাহানুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদের স্বাক্ষরিত অর্ধ কোটি টাকার প্রায় ১৫টি ডিজঅনার চেক জমা হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক ব্যক্তি চেক নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তার হিসাব নম্বরে কোন টাকা থাকায় কেউ টাকা তুলতে পারেননি। তাই চেক জালিয়াতির বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
বগুড়ার ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল