বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপির উন্নয়নের নামে অপরাজনীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের সাতমাথাস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণ সংসদ সদস্য হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে কথা বলার জন্য সংসদে পাঠিয়েছে। অথচ তিনি সাধারণ মানুষের মত প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যা নিছক নিজের প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। যেখানে সংসদ হচ্ছে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু, সেখানে শুধুমাত্র ফটোসেশনের জন্য লোক দেখানো এ রকম সংবাদ সম্মেলন সবাইকে হতবাক করেছে। সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ একজন সুচতুর ব্যক্তি। ওয়ান ইলেভেনের মতো দুঃসময়ে যিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনিই বগুড়া বিএনপির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন।
বগুড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এমপি সিরাজ যেসব উন্নয়ন দাবি করেছেন তার সবগুলোই চলমান রয়েছে যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়নের পথে। প্রয়াত নেতা মমতাজ উদ্দিন আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে ২০১৫ সালের ১২ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এসব দাবি আগেই উত্থাপন করা হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। বিএনপি নেতা সিরাজ সংবাদ সম্মেলন করে উন্নয়নের দাবিদার সাজার অপচেষ্টা করেছেন।
'২০০৬ সালের পর বগুড়ায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি' এমপি সিরাজের এমন বক্তব্যর প্রতিবাদ জানিয়ে মজিবর রহমান মজনু বলেন, তাদের নেতার নামে শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতাল ৫০০ শয্যা থেকে ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল এবং কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ, আইসিইউ বিভাগ সম্প্রসারণ এবং মেডিকেল কলেজে ১২টি নতুন বিভাগ হয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত রেল সংযোগ জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেকে) পাশ হয়েছে। অথচ ১৯৯৩ সালে এই সাংসদের বাসের ব্যবসা এসআর ট্রাভেলসের কারণেই তিনি বগুড়া পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের প্রস্তাবনার বিরোধীতা করেছিলেন। বগুড়া জজকোর্টে ১০তলা বিশিষ্ট সুবিশাল অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। চারমাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ২য় বাইপাস সড়ক নির্মাণ সরকারের উন্নয়নের অনন্য উদাহরণ। বগুড়াকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। বিএনপি আমলে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি, বরং সংস্কার করা হয়েছে। যা এখন ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন করে ফুটবল খেলার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়ামের সৃষ্টি হয়েছে। করতোয়া নদীকে দখলমুক্ত করার যে কথা তিনি বলেছেন তা অনেক আগেই সরকার শুরু করেছে। ভারত-বাংলাদেশ পানি চুক্তির আওতায় করতোয়া নদীকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে করতোয়া নদীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি উপজেলায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে নতুন মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার যে কথা তিনি বলেছেন তা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। বিমান বন্দর নির্মাণের কাজ আওয়ামী লীগ সরকার সমাপ্ত করলেও পরবর্তীতে তাদের সরকারই তা বিমান বাহিনীকে লিজ দিয়েছে। তারপরও বর্তমান সরকার বিমান উড্ডয়নের উপযোগী করে গড়ে তুলতে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজে হাত দিয়েছে। তাছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সিক্স লেনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আদমদীঘির সান্তাহারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক খাদ্য গুদাম তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এত উন্নয়নের পরেও তিনি তার সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলার চেষ্টা করেছেন যে বিএনপি বগুড়ায় উন্নয়ন করেছে যা একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল, রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, প্রদীপ কুমার রায়, আসাদুর রহমান দুলু, সুলতান মাহমুদ খান রনি, কামরুন নাহার পুতুল, এস.এম শাজাহান, এবিএম জহুরুল হক বুলবুল, মাফুজুল ইসলাম রাজ, মাশরাফী হিরো, আলরাজী জুয়েল, আব্দুস সালাম, শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, আমিনুল ইসলাম ডাবলু, জুলফিকার রহমান শান্ত, মুঞ্জুরুল হক মঞ্জু, ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, রাশেদুজ্জামান রাজন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম