গ্রেনেড তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান আতাউর রহমানসহ চার সদস্য। শনিবার দিবাগত রাত ১টায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পাকুরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা ও বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
গ্রেফতাররা হলেন- নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দাওয়াতি বিভাগ প্রধান আতাউর রহমান ওরফে হারুন ওরফে আরাফাত (৩৪), পুরাতন জেএমবির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বায়তুল মাল প্রধান ও নওগাঁ জেলার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান ওরফে নাহিদ ওরফে মোরছাল (৪২), পুরাতন জেএমবির গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বশীল জহুরুল ইসলাম ওরফে সিদ্দিক (২৭), পুরাতন জেএমবির বগুড়া জেলার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান (২৪)।
তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে সংবাদিকদের জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
রবিবার বেলা ১১টায় জেলা পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম আরও জানান,
গ্রেফতাররা ওই স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তারা কি কারণে বৈঠক করছিলেন তা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানা যাবে, এ কারণে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
গ্রেফতারদের কাছে থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ২টি চাপাতি, চাকু, ১ কেজি বিস্ফোরক, ৮টি গ্রেনেড বডি, ১০ টি গ্রেনেড তৈরির সার্কিট বডি, ১০০ কে ৩০টি রেজিস্টেন্স, ১০০ কে ১৫টি ক্যাপাসিটরসহ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বেটুবাড়ী আব্দুল করিম সরকারের ছেলে আতাউর রহমান সেখানকার একটি স্কুলের ল্যাব সহকারী। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে সন্ত্রাস নিরোধ আইনে মামলা হয়। ২০১৩ সালে তিনি জেএমবিতে যোগ দিয়ে রংপুর বিভাগের দাওয়াতি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। ২০১৮ সাল হতে তিনি রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দাওয়াতি বিভাগের প্রধান হন।
নওগাঁ জেলার পোরশা থানার কাশিপাড়া গ্রামের গোলাম মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে নাহিদ ২০০৪ সাল থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে নওগাঁ জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেদের কারাবন্দি পরিবারকে টাকা দিতেন।
পুরাতন জেএমবির গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বে থাকা জহুরুল ইসলাম ওরফে সিদ্দিক (২৭) গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুর সোনারপাড়া গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের ছেলে। ২০১১ সালে ঢাকায় সোয়েটার কোম্পানীতে চাকরিকালীন জেএমবিতে যোগ দিয়ে গাইবান্ধা জেলায় দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করে তিনি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছদ্মবেশে ডিম, পেপার ও পাপ্পন বিক্রি করে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতেন তিনি। তিনি মিজানুর রহমান ওরফে নাহিদের জামাতা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুরবাধ করমজাপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান বগুড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ২০১৬ সালে তিনি পুরাতন জেএমবিতে যোগদান করে পরের বছর জেলার দায়িত্বশীল হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি বগুড়া পৌর টেকনিক্যাল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশ করে।
ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন- পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, ওসি ডিবি আছলাম আলীসহ পুলিশ কর্মকর্তাগণ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের জেএমবির প্রধান টাঙ্গাইলের তৌকির আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর আতাউর রহমান এই অঞ্চলের দায়িত্ব পান। সেই থেকে তারা নিষিদ্ধ এই সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
তবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম