শরীয়তপুরে বোরো আবাদের কৃষি জমি কেটে মাছ চাষের ঘের তৈরির মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৃষকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে শত শত হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট করে দিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঘের তৈরির অভিযোগও উঠেছে। রাত দিন বিরতিহীনভাবে কৃষি জমিতে চলছে মৎস্য ঘের তৈরির কাজ।
জমির মালিক ও কৃষকরা জানায়, দীর্ঘ সময়ের জন্য কৃষি জমি লিজ নিয়ে ৭/৮ ফিট গভীর করে বাঁধ দিয়ে ঘের তৈরি করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। রাতদিন বিরতিহীনভাবে চলছে ঘের তৈরির কাজ। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কোনোভাবে বিষয়টি ঠেকাতে পারছে না।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইরি, বোরো ব্লকে কিছু জমি লিজ নিয়ে ঘের কাটা শুরু করে। কৃষকরা জলাবদ্ধতা, চাষাবাদে সমস্যা, ফসলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে ঘেরে জমি দিতে বাধ্য হয়। এভাবে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। বেকার হয়ে পড়ছে কৃষিনির্ভর শ্রমজীবীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে এই প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি জমি রক্ষার দাবিতে জেলার কৃষকরা মানববন্ধন করেও ফল পাচ্ছে না কৃষক।
জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শ্রেণি ভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রতি হেক্টর জমি ১০/১২ হাজার টাকায় ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নিচ্ছে ঘের ব্যবসায়ীরা। ভূমি আইনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে অবাদে চলছে ঘের খনন। তবে নড়িয়া ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও শরীয়তপুর সদর উপজেলাতে ঘের খননের প্রবণতা বেশি। নড়িয়া উপজেলায় গত ২/৩ বছরে কৃষি জমিতে অন্তত শতাধিক ঘের খনন করা হয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার ভেনোপা, মহিষার, ছয়গাও, নারায়পুর, রামভদ্রপুর এলাকায় এ মৌসুমে অন্তত ৬০টি ঘের তৈরি হয়েছে। এখনো অন্তত ৩০টি ঘের খননের কাজ চলমান রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও শরীয়তপুর সদর উপজেলাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিভিন্নভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘের খননের তথ্য দেওয়া হলেও ঘের খনন বন্ধের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কখনো কখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চলানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ঘের খননের কাজ ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ঘের খননের অভিযোগও রয়েছে। ঘের তৈরি করছেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে ভেনোপা এলাকায় আমি কৃষি জমিতে মৎস্য খামার তৈরি করছি।
স্থানীয় আব্দুল মতিন ও খালেক বলেন, ভেনোপা এলাকায় হাজার হাজার মণ ধান হতো। কিন্তু কৃষি জমি কেটে মৎস্য খামার তৈরি করাতে ধান চাষ করতে পারছি না।
কৃষক শহিদুল আকন ও মোকলেছুর রহমান হাওলাদার বলেন, মৎস্য খামার করার কারণে আশেপাশের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে আমরা ফসল ফলাতে পারছি না। রবি শস্য থেকে শুরু করে আমন ধান, ইরি, বোরো ধান চাষ করতে পারছি না। জমি উদ্ধার না করলে আগামীতে আমরা মরে যাবো।
জমির মালিক খলিল ও মাহমুদ বলেন, আমরা ঘেরে জমি দিয়েছি, কারণ জমিতে ফসল ফলানোর জন্য কৃষক পাইনা। তাই মৎস্য ঘেরে জমি দিয়েছি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাসিভ বলেন, কৃষি জমি কেটে মৎস্য ঘের তৈরি করার অভিযোগে কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন