মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কুমিল্লায় বিভিন্ন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে প্রায় পাঁচশ’ বিদেশি শিক্ষার্থী। তারা কুমিল্লার একটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ছে। তারা এখানে বাংলা ভাষা শিখছে। বাংলায় কথা বলে, বাংলায় গান গায়। খায় বাঙালি খাবার। কুমিল্লার রসমালাই ও খাদির পোশাকেরও তারা প্রেমে মজেছে।
সূত্র মতে, কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজে রয়েছে ২৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে ২৩৫ জন, ময়নামতি মেডিকেল কলেজে ১৩০ জন, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে ৬১ জন। তাদের মধ্যে বেশি শিক্ষার্থী ভারতের। রয়েছে পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, নেপাল ও ইউরোপের কিছু দেশের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজের শেখ রাসেল হোস্টেলে কথা হয় মালদ্বীপের শিক্ষার্থী মো. সাফরাজের সাথে। তার বাড়ি রাজধানী মালেতে। বাবা আবদুস সালাম টেলিফোন বোর্ডে কাজ করেন। তাদের ভাষা দিবেহী। কুমিল্লা এসে তিনি বাংলা শিখেছেন। এখানের খাবার তার প্রিয়। লিখতে পারেননা, তবে বাংলা একটু একটু পড়তে পারেন।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে এসেছেন এহমাদ ইয়ার। বাবা শিবলী খান প্রকৌশলী। দুই ভাই দুই বোনের সাথে মাঝে তিনি ছোট। এখন তিনি ৫ম বর্ষে। পাস করার পর ইন্টার্নি। তারপর তিনি ফিরে যাবেন পরিবারে। বাংলাদেশের শিক্ষা জীবনের সুন্দর সময় তিনি কখনও ভুলবেন না বলে জানান। অবসর সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষা নোয়াখালী,সিলেটের গুলো বুঝেন। এখনও চট্টগ্রামেরটা আয়ত্ব করতে পারেননি। প্রথমে খাবার আর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তারা দেশে রুটি খেতেন। এখানে এসে মাছে ভাতে বাঙালী হয়ে গেছেন! মো. তারেক এসেছেন পেশোয়ার থেকে। হাজেম খালিদ নাসির এসেছেন ফিলিস্তিন থেকে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। তারা থাকেন গাজায়। বাংলা এখনও পুরো আয়ত্ব করতে পারেননি। তাই জানা যায়নি তার দেশের অস্থিরতার কথা।
কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল তত্বাবধায়ক ডা. মো. ইজাজুল হক বলেন,‘শেখ রাসেল হোস্টেলের একটি ফ্লোরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরসহ সব শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে তারা সচেষ্ট বলে জানান।’
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. কলিম উল্লাহ বলেন,‘আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে মিশছে। বাংলা বলছে। বাংলায় গান গাইছে। তাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে মধুর ভাষা বাংলা।’
চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন,‘কুমিল্লায় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের বাংলা চর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষার পরিধি বাড়ছে।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার