২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৯:১৭

গৌরনদীতে আমন ধান সংগ্রহে কারসাজির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

গৌরনদীতে আমন ধান সংগ্রহে কারসাজির অভিযোগ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা খাদ্য গুদামে আমন ধান সংগ্রহ অভিযানে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও অতি গোপণে স্থানীয় সরকারী দলের ৩/৪ নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান নিয়ে খাদ্য গুদাম ভরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে।

অভিযানের শুরুতেই আমন ধানের পরিবর্তে ২ মেট্রিক টন বোরো ধান কারসাজির মাধ্যমে গৌরনদী খাদ্য গুদামে প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ছবি তোলার কারণে আমন ধানের পরিবর্তে বোরো ধান গোডাউনে ঢুকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে তার। 

কৃষকরা অভিযোগ করেন, নানা অজুহাতে কৃষকদের ধান নিচ্ছে না গৌরনদী খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এমনকি গোপণে অবৈধ পথে গোডাউনে ধান ভরারও কাজ চলছে। ২ মেট্রিক টন বোরো ধান গৌরনদী খাদ্য গুদামে ঢুকানো হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগের ৩/৪ নেতাকর্মীসহ খাদ্য গুদামের কর্মচারীরা। 

এদিকে সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ না পেয়ে কৃষকরা বাধ্য হয়ে হাট-বাজার গুলোতে প্রতি মন ধান ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এছাড়া উপজেলার তালিকাভূক্ত অর্ধশতাধিক কৃষকের এবার আমন ধানের ফলন না হওয়ায় একটি দালাল চক্র আমন ধান খরিদ কিনে গোডাউনে জমা দিয়েছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

কৃষকরা অভিযোগ করেন, চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শুক্র হলে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাহিন খান ও ছাত্রলীগ কর্মী বেল্লাল হাওলাদার প্রায়  ৮ মেট্রিক টন বোরো ধান কিনে খাদ্য গুদামের সরবরাহকৃত খাদ্য অধিদপ্তরের শীল যুক্ত দেড়শতাধিক নতুন বস্তায় ভর্তি করেন। এরপর ওই বস্তাগুলো দোনারকান্দি গ্রামের প্রতাপ সরকারের ঘরে ও তার বাড়ির কাছে রাস্তার ওপর মজুদ করেছিলেন। গৌরনদী ওসি এলএসডি’র যোগসাজশে সম্প্রতি ২ মেট্রিক টন বোরো ধান খাদ্য গুদামে ঢুকানোর অভিযোগ করেছেন তারা।  

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাহিন খান বলেন, গৌরনদীর খাদ্য গুদাম থেকে বেল্লাল হাওলাদার সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরের শীলযুক্ত খালি বস্তা এনেছিলো। আমরা ওই বস্তায় ৩ মেট্রিক টন বোরো ধান ভর্তি করে কুদ্দুস মাতুব্বর, বাদল সেরনিয়াবাতের নামের তালিকার ধান খাদ্য গুদামে দিতে গিয়েছেন। 

গৌরনদী খাদ্য গুদাম পরিদর্শক (ওসি এলএসডি) সুভাষ চন্দ্র পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নসিমনে বোরো ধান ভর্তি ওই বস্তাগুলো তারা সরবরাহ করেননি। কৃষকরা সরকারি শীলযুক্ত বস্তা খোলা বাজার থেকে কিনে বোরো ধান ভর্তি করে গোডাউনে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো। বোরো ধান গুদামজাত করার প্রশ্নই ওঠে না।  

গৌরনদী খাদ্য গুদামে ৮৪৭ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ইতিমধ্যে ৭ শ’ মেট্রিক টনের বেশী ধান সংগ্রহ হয়ে গেছে। 

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, কিছু কৃষক আমন ধানের পরিবর্তে বোরো ধান গোডাউনে দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে ওসি এলএসডি ধান দেখে আমন ধান হলে গুণগত মান  ভাল হলে তারপর গুদামজাত করেন। এক কৃষক বুধবার দুপুরে ২টি নসিমন ভর্তি করে বোরো ধান দেয়ার চেষ্টা করছিলো। তা ফেরত দেয়া হয়েছে। বোরো ধান গুদামজাতের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। 

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি মুজাহিদুল ইসলাম জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের শীলযুক্ত নতুন ৭৫টি বস্তা ভর্তি বোরো ধান সহ  মহাসড়কে চলাচলকারী অবৈধ ২টি নসিমন আটক করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর