প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়ার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং বখাটে সৈকত ও রুবেল ওরফে কালা রুবেল। গত শনিবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে সবশেষ সময় বেঁধে দিয়ে এ হুমকি দেয় বখাটেরা।
এদিকে, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমনকে একাধিকবার মারধর করে ও হাত কেটে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনায় আতঙ্কে কাজ করছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান সৈকত আওয়ামী প্রজন্ম লীগের পাথরঘাটা পৌর শাখার সভাপতি।
ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমনকে মারধরের কারণ জানতে গেলে কাইফির বাবা কাকন মোল্লাকে অপমান করে বখাটেরা। গতকাল রবিবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে আটটার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মুন্সিরহাট বাজারে বখাটেরা লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনা তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ও এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে।
এন.আই.খান রেসিডেন্সিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল ও একাধিক এলাকাবাসী জানান, কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে ইভটিজিং করে সৈকত, রুবেল ওরফে কালা রুবেলসহ একাধিক বখাটে। বিষয়টি ছাত্রীরা আমাদের জানায় এবং এর প্রতিবাদ করে বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র কাইফি মো. সাফওয়ান ও ইমন নামে দুই ছাত্র। প্রতিবাদ করায় ওই দুই ছাত্রকে মারধর করায় বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শালিসী করে মিলিয়ে দেয়া হয়। পরে এর জের ধরে গত ২৬ ফেরুয়ারি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুনরায় ওই দুই ছাত্রকে মারধর করে। কাইফি দশম শ্রেনির ছাত্র ও একই বিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক রফিকুল ইসলাম কাকন মোল্লার ছেলে ও ইমন ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এন.আই. খানের ভাতিজা।
তিনি আরও জানান, বখাটেদের মারধর ও উচ্ছৃঙ্খলার বিষয়টি একাধিকবার শালিসী হলেও বখাটেরা বখাটেপনা চালিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি পাথরঘাটা থানায় মৌখিক জানানো হয়।
পরে গতকাল রবিবার রাতে এক অভিভাক তার ছেলেকে মারধরের বিষয়টি জানতে আসলে মুন্সিরহাট বাজারে আসার পরেই বখাটেরা ওই অভিভাবককে অপমান করে। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায় গেলে উত্তেজনা বিরাজ করে ও ক্ষোভে ফেটে ওঠে। বখাটেদের উৎপাতের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ও শিক্ষকরা আতঙ্কিত রয়েছে ও নিরাপত্তহীনতায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এসিড নিক্ষেপ করে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয় বখাটে সৈকত ও রুবেল। সবশেষ দুদিন আগেও ওই ছাত্রীকে প্রেমে রাজি না হলে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করে এবং এসিড দিয়ে মুখ পুড়ে দিবে বলে জানান ওই ছাত্রী। ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে যেতে ভয় পাই, আমাকে পথে পেলেই আটকিয়ে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিবে।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। আপনাদের (সাংবাদিকের) কাছে কথা বলার পরই হয়তো আমাদের উপর হামলা চালাবে।
স্থানীয় কিবরিয়া, ইলিয়াছসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, সৈকত ও রুবেল ওরফে কালা রুবেল কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। এরা সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং। তারা এলাকায় ৮ থেকে ১০ জন সব সময় একসাথে বখাটেপনা করে এবং নেশায় আসক্ত। কয়েকদিন আগে সৈকত মাদক মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হয়। জামিনে বর হয়েই মিনারা বেগম নামে এক নারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে তিনি পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসায় রয়েছে।
মিনারা বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় জব্বারের কাছে পাওনা টাকা চাইতেই আমার স্বামীকে না পেয়ে আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাদের সাথে থাকা চাকু বের করে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ওসি) মো. সাইদ আহমেদ বলেন, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এরকমের অপরাধ করলে আইনের ফাঁক দিয়ে এড়াতে পারবে না। তিনি আরও জানান, রাতেই আমাদের টিম কাজ করেছে।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, বিষয়টি আমরা আগে থেকেই জানি। ওদের জালায় এলাকাবাসি অতিষ্ঠ। আমরা ওদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ