ধামরাইয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে অসহায় হয়ে পড়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার দরিদ্র হলেও এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
জানা যায়, ওই ছাত্রীর বাবা একটি কড়াই কারখানায় ডেইলি লেবার হিসেবে কাজ করতেন। করোনা ভাইরাসের কারণে এক মাস ধরে কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে আছেন তিনি। পরিবারে চার সদস্যের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তিনি।
এদিকে মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে আপোষের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় স্থানীয় মেম্বার ফারুক হোসেনও তাকে দেখছেন না। এখন কেউ তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না।
জানা গেছে, ধামরাইয়ের চৌহাট ইউনিয়নের মুন্সীচর এলাকার নিকলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী পাশের বাড়ির মোকছেদ আলীর (৫৫) বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করায় স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কয়েকজন মাতব্বরের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে আপোষের চেষ্টা চালায় চার সন্তানের জনক ধর্ষক মোকছেদ আলী। মাতব্বররা কয়েক দফায় ওই ছাত্রী ও তার বাবাকে আটকে রাখে।
ধামরাইয়ে আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের বাস চালক চানমিয়ার বাড়িতে ১২ ঘণ্টা আটকে রেখে ২ লাখ টাকা প্রদানের বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা আপোষ করা হলো মর্মে ধর্ষিতার বাবার কাছ থেকে সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এসময় মাতব্বর চৌহাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন, বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আল আমীন, মুন্সিরচর গ্রামের মরন আলী, ধর্ষক ও তার ভাই দরবার আলীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাটি জানার পর ধামরাই থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি দ্বিপক চন্দ্র সাহা তক্ষাণিক ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে ধামরাই থানায় মামলা নেন এবং ধর্ষক মোকছেদ আলী ও ধর্ষণে সহযোগিতা করায় তার স্ত্রীসহ কয়েকজন মাতব্বরকে গ্রেফতার করেন। বর্তমানে ধর্ষক ও তার স্ত্রী জেল হাজতে থাকলেও মাতব্বরা জামিনে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, চরম অভাবে আছে ওই ছাত্রীর পরিবারটি। এসময় কেউ তাদের সহযোগিতা না করলে দু-মুঠো খাবারও জুটবে না তাদের কপালে। এর মধ্যে গত বুধবার ওই ১১ বছরের স্কুল ছাত্রী সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেছেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতি জানান, দেড়টন সরকারি চাউল বরাদ্দ পেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি। পরে দিব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সামিউল হক জানান, আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই মেয়ের সিজারের সময় আড়াই হাজার টাকা প্রদান করেছিল। সরকারি ত্রাণ তাকে দেওয়া হবে এবং ওই পরিবারকে একটি সরকারি ঘরও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল