করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চার'শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শুটকি মেলা স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। শুটকি নিয়ে মেলায় পসরা সাজাতেন স্থানীয়রাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রমী এ মেলায় হাজারও লোকের সমাগম হতো। বেচাকেনা চলত নগদ অর্থে ও বিনিময় প্রথায়। এছাড়া উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অন্যান্য গ্রামের বান্নি (মেলা) ও পুণ্যস্নান আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর একটি কুলিকুন্ডার শুটকি মেলা। ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা বন্ধ হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এলাকার শুটকি ব্যবসার। ক্ষতি পোষাতে প্রশাসনের কাছে প্রণোদনার দাবী স্থানীয় জেলেদের।
স্থানীয় জেলেরা জানায়, প্রতিবছর বর্ষার পরই সিলেট, সুনামগঞ্জ, দিরাই ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিলে মাছ ধরে। ৪ ভাগের তিন ভাগ দিতে হয় বিলের ইজারাদারদের। তাদের ভাগের একভাগ মাছ শুটকি তৈরি করে। যা বৈশাখ মাসের প্রথমদিন কুলিকুন্ডার শুটকি মেলায় বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ধরা ও শুটকি তৈরি। একেক জন শুটকি ব্যবসায়ী মেলায় লক্ষাধিক টাকার অধিক শুটকি বিক্রি করে।
দ্বিবর সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, বছরে একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে উপজেরার প্রায় শতাধিক পরিবার। শুটকি বিক্রির আয়ের টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। মেলায় শুটকি বিক্রি করা বন্ধ হয়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এই নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা। এসব পরিবারকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজে আনা দরকার।
জানা গেছে, নাসিরনগর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ। আর প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে বসে লোকজ মেলা। জেলেদের নিজের হাতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শুটকির পসরা সাজিয়ে বসেন। এসব পসরায় থাকে বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুঁটি ও টেংরাসহ দেশি মাছের বাহারি শুটকি। এছাড়াও মেলায় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বাটি, পুতুল ও প্রদীপসহ অন্যান্য সামগ্রী স্থান পায়। মেলায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু, ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, কাঁচা আম, গম, রসুনসহ নানা জাতের পণ্যের বিনিময়ে শুটকি বেচাকেনা করেন। তবে সেটা সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়। এরপর চলে অর্থের বিনিময়ে বেচাকেনা।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে এমন সব জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী জানান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ থাকায় এ বছর বৈশাখী উৎসব পালন করা হচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার