মেয়র পদে লড়ার আগেই আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হতে হচ্ছে প্রার্থীদের। জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার আগে দলের নেতাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে হচ্ছে। প্রতিটি পৌরসভায় দলের ওয়ার্ড কমিটি ও পৌর কমিটি মিলে গড়ে ৮৫ জন ভোটার রয়েছে।
এসব ভোটারদের দিতে হচ্ছে নানা ধরনের উপঢৌকনসহ নানা প্রতিশ্রুতি। এতে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের যেমন পকেটের টাকা যাচ্ছে তেমনি ভোটারদের রাজি-খুশি করাতে কসরত করতে হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে ভোট কেনাসহ প্রভাব খাটিয়ে ভোট নেয়া হচ্ছে। ভোট নিয়ে ভোটারদের মারপিটের ঘটনাও ঘটছে।
ভোট নিয়ে হামলার শিকার হয়ে বেলকুচিতে এক ভোটার মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আর ভোটের আগে এ ভোটের কারণে অনেক জনপ্রিয় নেতা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। মেয়র প্রার্থীদের দাবি, দল যেন শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয় যারা জনসম্পৃক্ত-জনগণের বিপদে- আপদে পাশে থাকেন এবং সাধারণ ভোটারদের মনের আশা- আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দল দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেন।
বেলকুচি ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম হাসপাতাল বেডে শুয়ে থেকে জানান, আমি মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেত্রী আশানুর বিশ্বাসের সমর্থক ছিলাম। যে কারণে বৃহস্পতিবার ভোটের আগে আমাকে প্রতিদ্বন্ধী সাজ্জাদুল হক রেজাসহ তার লোকজন আমাকে বাড়িতে পিস্তল ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি এবং মারপিট করে। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমি ভোট দিতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মতো অনেক ভোটারকে হুমকি-ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী হাইব্রিড আওয়ামী লীগের কারণে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতারা নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৃণমূল এই আওয়ামী লীগ নেতার আকুতি- আওয়ামী লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের রক্ত যে সমস্ত নেতা ঝঁরায় তাদেরকে যেন মনোনয়ন না দেয়া হয়। এ জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লাপাড়ার মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম জানান, প্রার্থী সিলেকশনে তৃণমূলের মাত্র ৮৫টি ভোটেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী ব্যাপক প্রভাব খাটিয়েছেন। ভোটের আগে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের সংসদ সদস্যের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি-হুমকি ও ভোটারদের নানা ধরনের লোভ-লালসাসহ ভোটার প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। এমনকি ভোট পেতে থানার ওসিকেও ব্যবহার করা হয়েছে। এতে জনপ্রিয় এবং জনসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ নেতা যারা মেয়রপ্রার্থী তারা তৃণমূলের ভোটে হারছেন।
তার মতে, যারা দলের মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন বিশেষ করে সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেন শুধু তৃণমূল আওয়ামী লীগের মাত্র ৮৫ ভোটের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে জনসম্পৃক্ত ও জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রদান করেন।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আশানুর বিশ্বাস জানান, বেলকুচি পৌরসভার ৬জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ভোট হয়। নয়টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ১৮ জনসহ মোট ভোটার ৮৫ জন। এর মধ্যে তার সমর্থিত ভোটার গোলজার ও শামসুল আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশলী সাজ্জাদুল হক রেজার সমর্থকরা ভোটের আগে ভয়ভীতি-মারপিট করে। বর্তমানে শামসুল আলম হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আরো ৫ জনকে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে ভোট দিতে আসেনি। যে কারণে তৃণমূলের ৮৫ মধ্যে আমি ৩২ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩৬ ভোট পেয়েছে।
দেখা যায়, মেয়রপদে মূল লড়াইয়ের আগে তৃণমূলের ৮৫ জনকে ম্যানেজ করতে হিমশিম খেতে হয়। তৃণমূলের কিছু নেতাকে জোরপূর্বক বা টাকা দিয়েও ভোট কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, দলের তৃণমূলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ কাকে পছন্দ করে এটাও দলের নীতি নির্ধারককে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। একইভাবে যে জেলার প্রতিটি পৌরসভার প্রার্থী সিলেকশন করা হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া সিলেকশনের কারণে দলের মধ্যে মারপিট ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে- এর সাথে দলের কিছু প্রভাবশালী সন্ত্রাসী হাইব্রিড টাকাওয়ালা নেতাদের জন্য দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা-কর্মীবান্ধব ও জনসম্পৃক্ত নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে দলেরও চরম ক্ষতি হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার জানান, দেখা যায় দলে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশি। তাই তৃণমূলের ভোটে যে প্রার্থী ভোট বেশি পাবে সে অনুযায়ী সিরিয়াল করে নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আবার সিরিয়াল অনুযায়ী তিনজনের নামও পাঠাতে পারি। সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পাঠানো হয়। এর মধ্য থেকে দল যাকে মনোনয়ন দেবে সেই প্রার্থী হবে। তিনি ভোটে টাকা লেনদেন ও প্রভাবের বিষয়ে অবগত নন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক