করোনার এই সময়েও নারীদের নরমাল ডেলিভারি দিন দিন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র এবং অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে সেবার মান উন্নীত করে চলেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় এটি রংপুর বিভাগে মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের ১৪ দিনে এখন পর্যন্ত ৪৯টি নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে ৬৭টি এবং নভেম্বর মাসে ৭০টি নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে। হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন এভাবেই বাড়ছে।
অন্যদিকে, এ বছর প্রসূতী পূর্ববর্তী এএনসি সেবা নিয়েছে ১২৪২ জন এবং প্রসব পরবর্তী পিএনসি সেবা নিয়েছে ৫১১ জন। ফলে গত ৩ বছর ধরে স্বাস্থ্য সেবায় রংপুর বিভাগে ২য় ও ৩য় ও জেলার প্রথম হয়েছিল খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়াও বেস্ট ফিডিং কর্নার, ওআরটি কর্নার, অটিজম কর্নার, এএনসি ও পিএনসি এবং কেএমসি কর্নার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেওয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি হওয়া টংগুয়া গ্রামের রুনা বেগম, আঙ্গারপাড়া গ্রামের বিউটি রানী পাকেরহাটের প্রতিমা রায়, নেউলা গ্রামের রেজিনা খাতুনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, তাদের নরমাল ডেলিভারির শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী ও চিকিৎসকদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এতে তাদের একদিকে যেমন খরচ বাঁচলো অন্যদিকে প্রসবকারী মা সুস্থ আছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এবং হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে। যার ফলে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের সরাসরি ও মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। এছাড়া প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয়। যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরো জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সমাজ সেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেওয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড়, মশারি ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই