আম্ফান ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া ঘরটিই বিধবা লক্ষী রানীর একমাত্র আশ্রয়স্থল। ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া ঘরটির টিনের চাল নেই বললেই চলে। পাটকাঠির বেড়া সেটাও জায়গায় জায়গায় ভেঙে পাতলা হয়ে গেছে। রাতের কুয়াশায় ভিজে যায় ত্রাণে পাওয়া গায়ের কম্বলটি।
তীব্র শীতে বাবা হারা ৮ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে জড়োসড়ো জীবন কাটছে বিধবা লক্ষী রানীর। নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর আদিবাসী পাড়ার মৃত অনিল সরকারের স্ত্রী জয় লক্ষী রানী এভাবেই ছেলেকে নিয়ে কষ্ট করে চলছেন প্রতিনিয়ত।
জানা যায়, গত বছরের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রবল ঝাপটায় লক্ষী রানীর একমাত্র বসত ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়। পরে কোনোরকম বাঁশ লাগিয়ে ঘরটি দাঁড় করানো চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে ঘরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
আম্ফান ঝড়ের মাস খানেক আগে দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হয় তার স্বামীর। একমাত্র ছেলে অনিমেষ সরকারকে নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ও বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে দিন চালান লক্ষী।
শনিবার দুপুরে লক্ষী রানী জানান, ঝড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ার পর সরকার থেকে ঘর দেবে বলে ভূমি অফিস থেকে ঘরের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আর কেউ খোঁজ নিতে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর বাসা বাড়িতে কাজ করে কোনোরকম দিন চালাই। রাতে ঘুমাতে খুবই কষ্ট হয়। ঠান্ডায় ছেলে ঘুমাতে পারে না।
স্থানীয় আদিবাসী নেতা সুনিল বাগচী জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনরা ঘর পাচ্ছে। কিন্তু সেখানে এই বিধবার কোনো গতিই হলো না। মাত্র ২০ হাজার টাকার ব্যবস্থা হলেই ওই বিধবা সন্তানসহ মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই করতে পারতো!
স্থানীয় কাউন্সিলর মোহিত কুমার সরকার জানান, ওই বিধবা বনপাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার বাড়ি নম্বর ২৪৫। তার জন্য সরকারি ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার জমির কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ঘর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে করোনাকালীন ওই বিধবাকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।
পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে তার বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই