শিরোনাম
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:২৬

ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ দুই বোন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ দুই বোন

নেত্রকোনার কলমাকন্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের একমাত্র উপার্জনক্ষম অভিভাবক ভাইকে হারিয়ে দুই বোন এখন বাকরুদ্ধ। মা বাবাহীন নুরজাহান (১৮) ও শাহানা (১৫) কে রোজগার করে খাওয়ানোর একমাত্র অবলম্বন ছিলো ভাই জাহাঙ্গীর। ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে জাহাঙ্গীর তার দুই বোনকে লালন পালন করতেন। কিন্তু ইটভাটায় শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের জেরে বেলচার আঘাতে মারা যান জাহাঙ্গীর। 

মঙ্গলবার নিজ জেলা নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গ্রামের বাড়িতে তার লাশ নিয়ে আসা হলে এলাকাজুরে নেমে আসে শোকের ছায়া। অসহায় দুই বোনের সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এলাকাবাসীও। 

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মৌলার সাথে অসহায় দুই বোনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট ভাটার মালিক ১০ টাকা পাঠিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা সাহাব উদ্দিন মারা যান প্রায় ৮ বছর পূর্বে। তার তিন বছর পর মারা যান তাদের মা। মা-বাবার মৃত্যুর পর দুই বোনসহ সংসারের হাল ধরেন জাহাঙ্গীর। এরই মধ্যে একবোন নুরজাহান বিবাহের বয়সে পা দিয়েছে এবং আরেক বোন শাহানার বয়স ১৫ বছর। তাদের মুখে অন্ন যোগাতে ও পরিবারের সুখের আশায় একই গ্রামের মামাতো ভাই মৃত লাল মিয়ার ছেলে কালা মিয়া (৩২) ও সবুজ মিয়ার (২৫) সাথে কাজ করতে যান। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের বাইরপাথার এলাকায় আফাজ ব্রিক্স ফিল্ড নামের একটি ইট ভাটায় কাজ করেন তারা। 

ইটভাটায় বালু নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার সকালের দিকে সাথের শ্রমিক পঞ্চগড় এলাকার লোকজনের বেলচার ও লাকড়ির আঘাতে দুই মামাতো ভাই ও জাহাঙ্গীর আহত হন। তাদের সাথে কলমাাকান্দার হাছান মিয়া (৩০) নামের আরেকজন আহত হন। 

আহতদের মাঝে জাহাঙ্গীর ও কালা মিয়াকে প্রথমে ভালুকা সরকারী হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) ভর্তি করানো হয়। ওইদিন বিকালে মমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর মারা যান। এ অবস্থায় তার মাথায় বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। পুরো দুইদিন ধরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশের অপেক্ষায় অভিভাবকহীন দুই বোন ও স্বজনেরা। তাদের সাথে পুরো গ্রামজুড়ে বিরাজ করে শোকের মাতম। 

পরে লাশ নিয়ে আসা হলে গত মঙ্গলবার রাতে দাফন শেষে বুধবার তারা হয়ে পড়েন নিঃস্ব অসহায়। এদিকে এই দু'বোন কোথায় কার কাছে থাকবে এখন নেই তার নিশ্চয়তা। তারা কি কাজের জন্য পাড়ি জমাবে ঢাকায় নাকি এলাকাবাসীর সহায়তায় নিজ গ্রামে থেকে জীবন চালাবে তা জানে না তারা নিজেও। তবে তাদরে দাবী তারা তাদের শেষ সম্বল ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। 

বিডি প্রতিদিন/ মজুমদার 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর