ভোর থেকেই লোকজন ছুটে চলেছেন সবজি ক্ষেতে। নারী পুরুষসহ সব বয়সী লোকজন সবজি পরিচর্যাসহ বাজার জাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজি ক্রয় করতে বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ছুটে আসবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে এমন চিত্র দেখা যায়। তিতাস নদী সংলগ্ন ঘেঁষা বনগজ বিলে সবজি আবাদ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমিতে পরিণত হয়ে উঠেছে।
এ বিলের পতিত জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক ছাড়াই করলা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে বদলে যাচ্ছে ওই এলাকার শতাধিক কৃষকের জীবনযাত্রা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ মৌসুমে বনগজ এলাকায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। কম খরচে বেশী লাভ হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার সবজির আবাদ হয়েছে অনেক বেশি।
এদিকে এখানকার সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যেতে বিলের সর্বত্রই যেন সবজির পসরা বসছে। বর্তমানে বিলের বিস্তীর্ণ জমি থেকে সবজি সংগ্রহে এখন বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেখানকার কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, আখাউড়া পৌর শহর থেকে প্রায় ৪ কিমি: দুরে অবস্থিত বনগজ গ্রাম। এ গ্রামটি ছোট হলেও বিস্তীর্ণ এলাকায় করলা, মিষ্টি কুমড়া, উচ্ছে, টমেটো, খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। মাঠ জুড়ে শুধু সবজি আর সবজি নজরে পরে। সেচ পানির ব্যবস্থা করে স্থানীয় কৃষকরা সবজি চাষে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী গাড়ি এসে এখান থেকে সবজি নিয়ে যায় বাজারে বিক্রি করার জন্য। তাছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে ও রয়েছে এখানকার সবজির যথেষ্ট কদর। নানা জাতের টাটকা সবজি পসরা সাজিয়ে কৃষকরা বিক্রি করেন। কেনা বেচার হাক ডাকে যেন মুখরিত হয়ে উঠেছে বনগজ গ্রাম।
কৃষকরা বলেন, ধান ও পাট চাষে ফলন ভালো না হওয়ায় বর্তমানে তারা নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ফলে সবজি চাষেই বদলে দিয়েছে এ গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্যের চাকা। ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সবজি চাষের পরিধি। এ মৌসুমে কি পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়েছে তার সঠিক তথ্য কৃষি অফিসে না থাকলে ও প্রায় দেড় কোটি টাকার উপর সবজি বিক্রি হবে জানায় কৃষি কর্মকর্তারা। সবজির কারণে বনগজ গ্রামটি সবজি গ্রাম নামে জেলার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
কৃষক মো. রমজান মিয়া, মো. রুহুল আমীন, মো. সহিদুল ইসলাম, মো. হিরন মিয়া, মো. কবির মিয়া, মো. সৈয়দ খান সর্দার. মো. ইরন খান. মো. জামির হোসেন সরকারসহ অনেক কৃষক সবজি পরিচর্যাসহ বাজার জাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই। তারাও এসব কাজে সহযোগিতা করছেন। সবজি ক্ষেত যেন গোটা গ্রামটিকে সাজিয়েছেন সবুজে সবুজ করে। তাছাড়া গ্রামের হতদরিদ্র অনেক লোক সবজি ক্ষেতে কাজ করে বেকারত্ব গুছিয়েছে।
কৃষক মো. জামির হোসেন বলেন, বনগজ বিলে বর্ষার সময় প্রায় ৫ মাস পানি থাকে। এসময় কোন কিছু করা যায় না। কিন্তু এবছর বন্যার পানি অনেক আগেই চলে যাওয়ায় এ মৌসুমে ৬০ শতক জায়গায় করলা, মিষ্টি কুমড়া, খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তিনি। এতে তার ৫০ হাজার টাকা উপর খরচ হয় বলে জানায়।
ইতিমধ্যে তিনি ৮০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন বলে জানায়। তিনি বলেন, ধান চাষে লোকসান হওয়ায় গত প্রায় ৮ বছর ধরে সবজির আবাদ করছেন। এবছর তার ফলন ও বাজার দর ভালো হওয়ায় যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কৃষক হিরন মিয়া বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে এবছর প্রায় ৫০ শতক জায়গায় তিনি করলা, উচ্ছে, খিরা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গত ১০ দিনে তিনি ৪০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করছেন। বাজার দর ভালো থাকলে গত বছরের চাইতে দ্বিগুন লাভবান হবেন বলে জানায়।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, বনগজ গ্রাম সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সবজি চাষে খরচ কম লাভ বেশী হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে ঝুঁকছেন। সবজি চাষের ফলন ভাল করতে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর