নাটোরের লালপুর উপজেলার মোহরকয়া গ্রামে মাদ্রাসাছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার একমাস পার হলেও ১৪ অভিযুক্তের একজনও আটক হয়নি। পুলিশ বলছে, এখনো তদন্ত চলছে।
অভিযুক্তদের আটকের দাবিতে লালপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের পরিবার। তবুও আজ পর্যন্ত একজন অভিযুক্তকেও আটক করতে পারেনি লালপুর থানা পুলিশ।
অনুসন্ধান, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিশ্বম্ভরপুর গ্রামের আলা উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে ভাড়ইপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র রুহুল আমিন মিষ্টু (১৪)। মাদ্রাসা ছুটি থাকায় দরিদ্র বাবার সহযোগিতার জন্য মৌচাক থেকে মধু আহরণের কাজ করতো সে। গত ৯ মার্চ ভোর রাতে তার মোবাইলে ফোন করে অজ্ঞাত কেউ মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করার কথা বলে পাশের মোহরকয়া গ্রামে ডেকে নেয়।
কিছু সময় পরেই ওই গ্রামের আব্দুল আজিজের বাড়ির সামনের বাবলা গাছের সাথে বেঁধে চুরির অভিযোগ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তার বাবা-মা ও বড় ভাই মো. রমজান আলী (২২) ছাড়াতে গেলে তাদের উপরেও হামলা করা হয়। বড় ভাইকেও একইভাবে গাছের সাথে বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে মারধর করে জখম করা হয়। পরে গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় দুই ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে একই দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরের দিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুহুল আমিন মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোহরকয়া গ্রামের মো. আমজাদ হোসেন, ইয়াকিন, রাকিব, আয়নাল, মো. মঞ্জু ঘোষ, বাবলু মাওলানা, মলা, আতিকুর, রবি, আলম, ফারুক, শহিদুল ও আব্দুল আজিজসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, লাশের মাথার ডান পাশে কানের ওপরে ও নিচে, বুক, কপাল, দুই হাত নখসহ পুরোটা কালশিরা, পিঠে আঘাতের অসংখ্য জখম, কালশিরা দাগ ছাড়াও তার দুই পা হাঁটু থেকে আঙুল পর্যন্ত থেঁতলে দেওয়া ছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবু সিদ্দিক রবিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার পর নিহত মাদ্রাসাছাত্র, তার বড় ভাই ও বাবার নামে দোকান মালিক প্রথমে একটি চুরির মামলা দিয়েছিল। নিহতের পর তার বাবা মারধর করে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা দিয়েছে। উভয় মামলার তদন্ত চলছে।
নিহতের বড় বোন সাথী খাতুন বলেছেন, জমি-জমার বিরোধের কারণে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে তার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বাবুল মাওলানা বলেছেন, চুরি নয়, একটি নারী ঘটিত বিষয়ের জের ধরে এই ছেলেকে মারধর করা হয়েছিল, পরে সে মারা গেছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশিকুর রহমান মিন্টু বলেছেন, মাদ্রাসাছাত্র রুহুল আমিন খুব ভাল ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর যে দোকানে চুরির কথা বলা হয়েছে, সেই দোকান খুবই ছোট। দোকানটিতে তেমন কোনো মালামালও থাকে না। অন্য কোনো শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও কোনো অভিযুক্তকে আটক না করার কারণ জানতে চাইলে লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান বলেছেন, কেউ আটক না হওয়াকে আমাদের ব্যর্থতা বলতেই পারেন, তবে আসামিদের আটকের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই