১৬ এপ্রিল, ২০২১ ২২:১৭

শেরপুরে শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

শেরপুরে শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

বগুড়ার শেরপুরে শালফা বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তার (৪৫) মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যদিও এই শিক্ষকের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ লেখা হয়েছে। 

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারপিটে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি প্রভাবশালীদের চাপে আইনের আশ্রয় না নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতের পরিবার লাশ দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

শুক্রবার ভোররাতে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুরাতাইড় গ্রামের লোকমান হোসেন মন্ডলে ছেলে।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গত ৩ এপ্রিল সকালে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুরাতাইর গ্রামে অবস্থিত বাজারের একটি চা-স্টলে আসন্ন খামারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে দুই প্রার্থী মাজেদুর রহমান মিলন ও বর্তমান মেম্বার এনামুল হক রানার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতাণ্ডা শুরু হয়। এমনকি তা দু’পক্ষের মধ্যে মারামারিতে রুপ নেয়। একপর্যায়ে রানা মেম্বারের কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করা শহিদুল ইসলাম, তার ছেলে আবু রায়হান ও গ্রামের বাসিন্দা আলী আজমসহ বেশকয়েকজন ব্যক্তি আরেক মেম্বার প্রার্থী মিলনের কর্মী স্কুলশিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকে বেধড়ক মারপিট করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। 

স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে বগুড়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর গত ৭ এপ্রিল সেখান থেকে বগুড়ায় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করা হয়। এরইমধ্যে শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এই স্কুল শিক্ষককে। আর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর রাতে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে সবকিছু গোপন রেখে নিহতের লাশ শজিমেক হাসপাতাল থেকে মাগুরাইড় গ্রামে এনে তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয়। এক্ষেতে নিহতের লাশের ময়না তদন্তও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, রানা মেম্বারের পক্ষের লোকজন এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তাই অন্যায়-অবিচার করলেও কেউ প্রতিবাদ করেন না। যার কারণেই দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ওই স্কুল শিক্ষককে মারপিট এবং মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি থানায় কোনো লিখিত অভিযোগও করেননি বলে দাবি করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীকে মারধর করা হয়। এরপর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এছাড়া নানা জটিল রোগেও ভুগছিলেন। একপর্যায়ে হাসপাতালেই মারা গেছেন। তাই আমার কোনো অভিযোগ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর আবার তার লাশ কাটা হউক আমি তা চাই না। এসব বলে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।

এদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে শহিদুল ইসলাম ও তার ছেলে আবু রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তারা। 

শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে ওই স্কুল শিক্ষককে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এমন একটি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাদের কোনো অভিযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর